অশান্ত হয়ে উঠছে আন্ডারওয়ার্ল্ড তালিকা হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের

18

কাজির বাজার ডেস্ক
আর মাত্র কয়েক মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক দাগি ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে পুরনা গ্রæপকে সংঘবদ্ধ করছে। একইভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ড আবার অশান্ত হয়ে উঠছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন কারাগারে বসে কিংবা বিদেশে পলাতক থেকেই রাজধানীকে নিয়ন্ত্রণের নামে অশান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত। দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে নতুন গ্রæপ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বাইরে ঢাকাসহ শহরগুলোতে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যরাও সন্ত্রাসী কর্মকাÐে জড়াচ্ছে। এদের নির্বাচনে কাজে লাগাতে কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এই তালিকায় কারাগারে এবং বাইরে থাকা সন্ত্রাসীদের নাম থাকবে। একইভাবে নির্বাচনের পূর্বাপর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের নতুন করে তালিকা তৈরির পাশাপাশি তাদের ও পৃষ্ঠপোষকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী মাসে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফায়দা লুটতে পেশাদার অপরাধী বা অবৈধ অস্ত্রের চক্রগুলো নড়াচড়া শুরু করেছে। সীমান্তের অরক্ষিত কিছু এলাকাসহ (কক্সবাজার-বান্দরবান) বিভিন্ন কৌশলে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করানো হচ্ছে। দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত মোস্ট ওয়ান্টেড শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ওরফে মন্টি ওরফে হাজি সাহেব সারা দেশেই তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জাল ছড়িয়ে রেখেছেন। বিশাল বাহিনীর গডফাদার জিসান সরাসরি কোনো রাজনৈতিক পার্টিকে সমর্থন করেন না। তার অনুসারীদের দাবি, যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তিনি সে সরকারেরই লোক। বিগত সময়ে রাজধানীতে সন্ত্রাসী কায়দায় যেসব হত্যাকাÐ হয়েছে তার সিংহভাগই জিসানের কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, এমনই আর এক শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ২৬ বছর জেল খেটে কিছুদিন আগে মামুন জামিনে মুক্তি পায়। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকেই মামুনকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল কারাবন্দি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। জানা গেছে, কয়েকদিন আগে তেজগাঁওয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেও কিলিং মিশন ব্যর্থ হলেও দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আবারও প্রকাশ্য বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। এ ঘটনায় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়া সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মগবাজারের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী রাসু। ২০ বছর জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন ঝিগাতলা, ধানমÐি ও কামরাঙ্গীরচরের কথিত ‘ক্যাপ্টেন’ তারেক সাঈদ ওরফে মামুন। তিনি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু, আদালত চত্বরে আইনজীবী মোর্শেদ হত্যা মামলা, আলোচিত হিমেল ও রহিম হত্যা মামলার চার্জশিট ও সাজাভুক্ত আসামি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, যশোর ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা দাগি সন্ত্রাসীরা দেশে ফিরছেন।
আগামী নির্বাচনের আগে এভাবে সন্ত্রাসীদের তৎপর হওয়ার চেষ্টার বিষয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকায় কারাগারে এবং বাইরে থাকা সন্ত্রাসীদের নাম থাকবে। কারাগার থেকে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, কারাগারে বসে অপরাধ বা বিদেশে বসে অপরাধ, সবই অপরাধ। দেখুন যিনি কারাগারে আছেন, তিনিও তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করছেন। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বা ফোনে কথা বলা, এটাও কিন্তু তার একটি নাগরিক অধিকার হিসেবে তিনি করে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একজন কয়েদির যে অধিকার, মানবাধিকার সেটাকে তারা মিস ইউস করছেন।
এর আগে গত সোমবার সদ্য নিয়োগ পাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্রের ঝনঝনানির আশঙ্কা করেন। এর একদিন পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের এলাকাভিত্তিক তালিকা করার ঘোষণা এলো। নয়া ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে অপরাধীরা যাতে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র বহন করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হবে। নির্বাচনের সময় অপরাধী চক্রকে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন থেকে বিরত রাখতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে ডিএমপি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, আশ্বস্ত করেন তিনি।
অপরদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অতীতে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিহত হলেও তাদের অস্ত্রভাÐার রয়ে গেছে সুরক্ষিত। ফলে মাঠ পর্যায়ে ক্যাডাররা ওই অস্ত্র ব্যবহার করে ইউপি নির্বাচনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। এ কারণে নির্বাচনের সময় বা এর আগে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রার্থী কিংবা তাদের কর্মীরা গণহারে খুন হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আগামী জানুয়ারি মাসের শুরুতে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে নিচ্ছে। প্রতিবারই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হয়। এবারও নির্বাচনের আগে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে তাদের তৎপরতা শুরু করেছে।
চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রকাশে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাজাভোগ শেষে বা জামিন পেয়ে যেসব সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পাচ্ছেন, তারা পুনরায় অপরাধে জড়াচ্ছেন কি না, সেটার জন্য পুলিশ ‘জেল প্যারেড’ করে থাকে। তারা কখন ছাড়া পাচ্ছেন, কোথায় অবস্থান করছেন, জেল প্যারেডের মাধ্যমে এসব খোঁজখবর রাখা হয়। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে এদের সহায়তা করা হয়। প্রয়োজন হলে তার বিষয়ে এলাকার লোকজনকে সতর্ক করা হয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পুলিশের ১ হাজার ৫২৮ জন সদস্য জেল প্যারেডে অংশ নিয়েছেন। পুলিশ এ কাজটি নিয়মিতই করছে।