প্রতিবন্ধীরা পাক সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা

8

 

ভোরের আলো উজ্জীবিত করে তোলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, পথ দেখায় অনিন্দ্য একটি দিনের। অনেক মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়, তন্মধ্যে ব্যর্থতার চিত্রও ফুটে ওঠে; মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পদচারণা। জন্ম থেকে মৃত্যু সমাজের প্রতিটি মানুষ সুস্থ-সবল জীবন অতিবাহিত করতে পারে বৈকি? ক্ষুদ্র পরিসরে বেড়ে ওঠে আমাদের মতো তবে তারা আমাদের মতো স্রষ্টার সর্ব আশীর্বাদে পুষ্ট নয় কারোর থাকে শারীরিক সমস্যা, কারোর মানসিক। তবুও তারা থেমে থাকে না, বয়ে চলে প্রাণবন্ত সমাজের সুস্থ মানুষের মতো সাফল্যের চ‚ড়ায়। সাফল্য অর্জন একার পক্ষে সম্ভব নয়, নিজের পরিশ্রম, সমাজের সহযোগিতা এবং মা, বাবা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দোয়ায় সাফল্য অর্জিত হয়।
কিন্তু একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মা-বাবা থাকলেও সর্বস্তরে পাচ্ছে না সাহায্য-সহযোগিতা। প্রতিটি সন্তান মা-বাবার পরম আদরের হলেও সমাজের মধ্যে অবহেলিত হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। সরকার তাদের জন্য বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও, সর্বস্তরে তারা পাচ্ছে না তেমন সুযোগ-সুবিধা। মৌলিক অধিকার থেকেও চরমভাবে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বিঘœ ঘটে। তারাও স্বপ্ন দেখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কিছু করার দেশ ও জাতির জন্য। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করে তখন শুধু তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেননা স্কুল-কলেজে পড়াকালীন তাদের জন্য ছিল পড়াশোনার বিশেষ ব্যবস্থা যেমন-বেইলব্যবস্থা এবং সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তারা উচ্চশিক্ষায় পা রাখে; ধীরে ধীরে সেসব সুবিধার পরিমাণ কমে যায় বরং বাড়ার তুলনায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামনে উঁকি দেয় নানা চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার সময়ে শ্রম্নতি লেখক খোঁজা, পড়াশোনার জন্য নেই বেইলের ব্যবস্থা; গুটিকয়েক বইয়ের বেইল থাকলেও হয়তো পুরাতন, ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায় নতুবা ডিপামেন্টে নতুন কোর্স যুক্ত হওয়ায় নেই কোর্সের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, তাদের নির্ভর করতে হয় রেকর্ডিং-এর ভরসায়, যতটুকু পারে শুনে-পড়ে পরীক্ষায় বসে, এভাবে কাটাতে হয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রেও পোহাতে হয় তাদের আরও নতুন ঝুঁকি। জীবনের প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অতিবাহিত করতে হয় তাদের স্বাভাবিক সুস্থ জীবন।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষের সাহায্য সহযোগিতার হাত, তাদের প্রতিটি ধাপে যাতে না পোহাতে হয় কোনো সন্দিহান, দিনের পর দিন রাতের পর রাত যেন না ঘুমিয়ে চিন্তায় যেন থাকতে না হয় তাদের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক যাতে তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বেইলব্যবস্থার সঙ্গে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে না হয়; সব ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু সুনিশ্চিত হোক কর্মক্ষেত্র কিংবা উচ্চশিক্ষায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্যই গড়ে উঠেছে থার্ড আই নামক সংগঠন। দুর্নিবার কাজ করছে এই সংগঠনটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশে বহু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কল্যাণে গড়ে উঠুক বিভিন্ন সংগঠন দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও, তারাও এগিয়ে আসুক আঁধারে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার লক্ষ্যে তাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হোক তাদের অমসৃণ জীবনকে মসৃণ করার সুদৃশ্য। সরকারের কঠোর তদারকির প্রয়োজন ও সবার কাছে পৌঁছাতে পারে। তারাও কষ্টের জীবনে প্রশান্তির সুখ বয়ে আনবে; এগিয়ে যাবে প্রতিযোগিতামূলক জনসমাজের একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিশেষ পদক্ষেপ আমাদের এই ভাই-বোনদের জীবনে সুফল বয়ে আনুক, তারাও যে নজরকাড়া সাফল্য বয়ে আনতে পারে প্রাত্যহিক জীবনে সেই কামনা রইল; হোক তাদের ভোগান্তির চিত্রের পরিসমাপ্তি। নবপল্লবে ফুটে উঠুক তাদের জীবনের প্রতিটি অংশবিশেষ প্রফুলল্লর সঙ্গে।