জাফলংয়ে বিপন্ন প্রাণী লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

3

কে.এম লিমন, গোয়াইনঘাট

সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে একটি বিলুপ্ত প্রায় লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে উপজেলা প্রশাসন এ লজ্জাবতী বানরটিকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধার অভিযানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, গোয়াইনঘাট থানার এস আই এনামুল হকসহ পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে তাঁরা জানতে পারেন, গত দু’দিন ধরে জাফলংয়ের কালিনগড় এলাকায় নিজাম উদ্দিন খলিফার বাড়িতে একটি লজ্জাবতী বানর আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে তাঁরা নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বুঝিয়ে বানরটি ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তাকে জানানো হয় প্রচলিত বন্য প্রাণী আইনে যেকোনো বন্য প্রাণী লালন, পালন, ধরা এবং হত্যা করা দন্ডনীয় অপরাধ। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমানকে বিষয়টি অবগত করলে ইউএনও ও পুলিশ সদস্যরা গতকাল দুপুরে গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে লজ্জাবতী বানরটি উদ্ধার করেন।
বন্য প্রাণী গবেষকদের সূত্রে জানা গেছে, লজ্জাবতী বানর লাজুক বানর নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লজ্জাবতী বানরকে বিপন্ন প্রায় প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এটি দেশের ক্ষুদ্রতম বানর জাতীয় প্রাণী। লজ্জাবতী বানর মূলত বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এগুলো নিশাচর ও বনের গভীরে উঁচু গাছে থাকতে পছন্দ করে। দিনে গাছের খোঁড়লে বা ঘন পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে কাটায়। বিরল, নিশাচর ও লাজুক হওয়ায় দিনে সহজে চোখে পড়ে না। এগুলো গাছে গাছেই থাকে এবং সহজে মাটিতে নামে না। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাফেরা করে। এগুলো সাধারণত ফল, পাতা, উদ্ভিদের কষ বা নির্যাস ইত্যাদি খায়। মাঝেমধ্যে বড় কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম-ছানা, সরীসৃপও খেয়ে থাকে।
নিজাম উদ্দিন খলিফা জানান, গত দু’নি আগে রাতে বানরটি আমার ঘরে প্রবেশ করলে প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। পরে অনেক কষ্ট করে আরেক জনের সহযোগিতায় এটিকে ধরে বাসায় রাখি। প্রথমে এটি চিনতে পারিনি। পরে স্থানীয়রা বলছেন এটি লজ্জাবতী বানর। এরপর তাকে খাবার হিসেবে কলা দিয়েছিলাম। বানরটিকে পেয়ে আমার পরিবার লালন পালন করে আসছিলাম। আজ বানরটি নিয়ে গুচ্ছগ্রামে গেলে ইউএনও স্যার ও পুলিশ সদস্যরা আমাকে বুঝিয়ে বললে বানরটি আমি তাদের হাতে তুলে দেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশেই লজ্জাবতী একটি বানর আটকা পড়েছে খবর পেয়ে সাথে সাথে এটি উদ্ধার করি। বানরটি প্রথমে দিতে না চাইলেও বুঝিয়ে বলার পর নিজাম উদ্দিন খলিফা সেটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। উদ্ধারকৃত বানরটিকে বন বিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আরও একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে স্থানীয় বন বিভাগ।