প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন হউক

11

বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন বছর ধরে চলছে করোনা মহামারি। সম্প্রতি তা আবারও বিস্তার লাভ করছে। এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তার ওপর গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পাশ্চাত্যের নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা বিপর্যয়ের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
উন্নত দেশগুলোও আজ অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। এর ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে যাওয়ায় আমাদের মোট রপ্তানি কমে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। প্রবাস আয় কমে যাচ্ছে। এসবের প্রভাব পড়ছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। অন্যদিকে খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। এই সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার সচিব সভায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে আছে, দেশে খাদ্যের মজুদ ১৫ লাখ টনের বেশি রাখা, ওএমএসসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় টিসিবির যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বিদেশি অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকা, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহার এবং আমদানি কমানোসহ আরো কিছু পদক্ষেপ।
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এতটা তীব্র যে স্মরণকালের মধ্যে জনদুর্ভোগ সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক দেশেই রুটির জন্য মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আফ্রিকার অনেক দেশে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কার অবস্থা কমবেশি সবাই জানি। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে এই সংকট মোকাবেলা করব, তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতেই হবে। পাশাপাশি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। কারণ পরিস্থিতি যেকোনো সময় আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। আপৎকালীন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো প্রস্তুতি আমাদের থাকতেই হবে। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী দেশে খাদ্যের মজুদ ১৫ লাখ টনের বেশি রাখতে বলেছেন। এ জন্য অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি কোথায় কোথায় খাদ্য পাওয়া যায়, তা জেনে সেসব দেশ থেকে খাদ্য আমদানি বাড়াতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ অবশ্যই আসন্ন সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হবে।