শ্রীমঙ্গলে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দিলেন চা শ্রমিকেরা

10
শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মালিক পক্ষের বৈঠকের পর ১২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণের পর বাগানের চা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার সকালে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা ১৯ দিন আন্দোলনের পর চা বাগানের কাজে যোগ দেন শ্রমিকেরা। সরেজিমনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়া,খাইছড়া ও জেরিন, বিটিআরআই চা বাগান ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকেরা পুরোদমে কাজ করতে দেখা গেছে। তার আগে শ্রমিকরা কাঁধে ঝুলি আর মাথায় বাঁশের ছাতা নিয়ে সকাল নয়টার দিকে কাজে বের হন তারা।
চা-বাগানের সরদারদের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা বাগানে ভাগ হয়ে বিভিন্ন সেকশনে পাতা তোলার কাজ শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী চা শ্রমিকদের পিঠের ঝুলি ভরে উঠতে চা পাতায়। তবে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক বাগানের শ্রমিকরা কাজে যাননি। একই অবস্থা দেশের ২৪১টি চা বাগান মৌলভীবাজারসহ সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চা বাগান গুলোতে।
ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ায় চা শ্রমিকদের বাগানে পাঠিয়েছি। তারা গতকাল সকাল থেকে বাগানে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সবদিক বিবেচনা করে যে মজুরি নির্ধারণ করেছেন, তাতে আমরা খুশি। এজন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
ওই বাগানের শ্রমিক ময়না হাজরা বলেন, ‘ দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এতদিন কাজ করিনি। এক বেলা খাইছি, আরেক বেলা খাইতে পারিনি। এখন তিন বেলা খাইতে পারবো।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন তিনি। আমরা তা মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যেক বাগানের শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সবাই কাজে যাচ্ছেন। গতকাল চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। এ কারণে কিছু বাগানের শ্রমিকরা কাজে যেতে পারেনি। আজ সোমবার থেকে শতভাগ শ্রমিক কাজে যোগ দেবেন।’
ভাড়াউড়া চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক গৌতম দেব বলেন, ‘শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। যদিও গতকাল রবিবার বাগান সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। সেই অনুযায়ী নগদে কাজ হচ্ছে। তবে এবার চা শ্রমিকরা মানসম্মত মজুরি পেয়ে খুশি।’
এদিকে এক পরিসংখ্যানে জানা গেল, একজন চা শ্রমিক ২৪ কেজি চা উত্তোলন করলে ১৭০ দৈনিক মজুরি হয়। প্রতি কেজি চা এক টাকা আট পয়সা। প্রতিদিন একজন শ্রমিক ১০০-১৫০ কেজি চা উত্তোলন করতে পারে। এতে তার প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারে। আবার কোন শ্রমিক পনরোশত টাকা আয় করার রেকর্ড রয়েছে। গতকাল রবিবার ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনে একেকজন শ্রমিক ১০০ থেকে ১৫০ কেজি চা উত্তোলণ করেছেন। ওইদিন বাগান কর্তৃপক্ষ নগদ পেমেন্ট করেছে শ্রমিকদেরকে।
প্রসঙ্গত, ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে গত ৯ আগষ্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছিলেন না অনেকে।
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে শনিবার (২৭ আগষ্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, চা শ্রমিকদের আশা প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন। সেটাই তিনি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার থেকে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিগগিরই চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করবেন।