আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কইতো যাহা আমার দাদায়/কইছে তাহা আমার বাবায়/এখনও, কও দেখি ভাই মোর মুখে কি/অন্য কথা শোভা পায় …। পূর্বপুরুষের সেই ভাষার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছিল বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।
দ্রোহের চেতনায় শামিল হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল মাতৃভাষার অধিকার। আর সেই বায়ান্নর খর¯্রােতা পথ ধরেই এসেছিল ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই ভাষা আন্দোলনের পথরেখাতেই বিকশিত হয়েছিল বাঙালীর জাতীয়তাবাদ আন্দোলন। আর ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে চলছিল আরেকটি বড় আন্দোলন। সেটা ছিল রাজবন্দীদের মুক্তির আন্দোলন। বিশেষভাবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সেই সময় সোচ্চার ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। সেই বিক্ষুব্ধ সময়ের সাক্ষ্য মেলে তৎকালীন সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে। সেই সুবাদে ওই সময় প্রতি সংখ্যাতেই শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে নানা প্রতিবেদন।
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা আইনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন শেখ মুজিব ও বরিশাল মুসলিম লীগের সাবেক সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ। কারাগারে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করার চাইতে আমরণ অনশন শুরু করেন শেখ মুজিব। ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাক সরকারের নির্দেশে তাকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বন্দীমুক্তির বিষয়ে পূর্ববঙ্গ বিধান-পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির একটি যুক্ত আবেদন পেশ করা হয়। এতে প্রদেশের সকল রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তির দাবি জানানো হয়। এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব, আতাউর রহমান খান, মওলানা রাগিব আহসান, সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হাসান ইকবাল প্রমুখ।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মুখে সৈন্যরা গুলি ছুড়লে এবং কয়েকজন শহীদ হওয়ার ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনশন ভঙ্গের বার্তা পাঠান মওলানা ভাসানী। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকার প্রয়োজন আছে।’
১৯৫২ সালের ৫ মার্চ সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাধু ভাষায় লেখা সেই প্রতিবেদনে বলা হয় ‘পূর্ব-পাক আওয়ামী মুসলিম লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। জনাব রহমান ১৯৫০ সালে নিরাপত্তা আইনে বন্দী হন। কয়েক মাস যাবত তিনি হৃদরোগে ভুগিতেছিলেন। কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে, কিন্তু সরকার টাকার অজুহাতে তাহাকে পুনরায় জেলে প্রেরণ করে। কারা প্রাচীরের অন্তরালে তিলে তিলে জীবন বিসর্জন দেয়া অপেক্ষা আমরণ অনশন শ্রেয় মনে করিয়া মিঃ রহমান বিগত ১৬ ফেব্রুয়ারি হইতে অনশন শুরু করেন। দেশময় ইহার দারুণ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিয়া সরকার জনাব রহমানকে মুক্তি দিয়াছেন।’