যত বাধাই আসুক জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে – প্রধানমন্ত্রী

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসরণ করে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রেখেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন- আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, সকলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যেখানে কোন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না। মানুষের দুঃখ ও কষ্ট দূর হয়ে মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সোমবার দেশে প্রথমবারের মতো প্রদত্ত ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- যত কষ্ট, আঘাত, বাধা আসুক না কেন; যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। দারিদ্র্য ও মঙ্গা বলতে দেশে কিছু থাকবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমার পথচলা। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। ইনশা আল্লাহ! একদিন উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বেইলী রোডে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও মানবতাবাদী কূটনীতিতে বঙ্গবন্ধুর অনন্য অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে দু’দেশ এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি আমিরাতে বাংলাদেশের জন্য শ্রম বাজার উন্মুক্ত করায় ভূমিকার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি এবং দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করায় এবং বর্তমান সরকারের আমলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের অভিযাত্রায় অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশেদ আলমকে ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড-২০২০’-এ ভূষিত করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এ্যাক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড-২০২০’ বিজয়ী কূটনীতিকদের নাম ঘোষণা করেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশেদ আলম পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সম্পাদিত ‘শেখ হাসিনা বিমুগ্ধ বিস্ময়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, দেশী-বিদেশী কূটনৈতিক ও বিভিন্ন মিশন এবং সংস্থার প্রধানগণসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার বিজয়ীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ^াস করি, প্রতিবছর এই পদক প্রদানের মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি, আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কূটনীতিকগণও তাদের স্ব-স্ব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন শিখরে উন্নীত করতে উৎসাহিত হবেন। তাঁর সরকার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছেন। এটি আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য উল্লেখ করে তিনি এই সফলতার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যা সমাধানে জাতির পিতা উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও কিছু না করায় জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়ে আইন করে যান। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে সমুদ্রসীমা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে সরকারগুলো এসেছিল। তাঁরা এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে কিভাবে এই সমুদ্রসীমা বাস্তবায়ন করতে পারি তার ব্যবস্থা নেই। আমরা আনক্লজ সই করি এবং দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পরে আমাদের প্রচেষ্টা এই সমস্যা সমাধানের। ঠিক যেভাবে ভারতের সঙ্গে আমরা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি, যেটা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। সেই সঙ্গে সঙ্গে মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাঁর লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে ঠিক তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখে যাচ্ছি। এই বিজয়ের মাসে দেশে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মিয়ানমারের নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকেও তাঁর সরকার আশ্রয় দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি ও মানবাধিকার যেন রক্ষা পায়। এক্ষেত্রে আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। এটা আমাদের নীতি ও আদর্শ। জাতির পিতা আমাদের সে আদর্শ ও সংবিধান দিয়ে গেছেন। সেখানে আমাদের যে চার মূলনীতিÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই নীতি মেনেই দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষকে আর দরিদ্র থাকতে দেব না। দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত হবে। উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন পাবে। জাতির পিতার সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আদর্শ ধারণ করছি। স্বাধীনতার লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জন করার জন্য আমরা ব্যাপকভাবে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাঙালী মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী বিজয়ী জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়ের ফসল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে। দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও উন্নত জীবন পাবে। এটাই ছিাে জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি।
দেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই আমাদের বড় অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) আমরা অর্জন করব ২০৩০ সালের মধ্যে। পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ উল্লেখ করে এই বদ্বীপের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
যে দু’জন কূটনীতিক আজকের পদক বিজয়ী তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসাধারণ কূটনৈতিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল মোঃ খুরশেদ আলম (অব) কে ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ পদক প্রাপ্তির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ প্রসঙ্গে বলেন, আমার জন্মদিনে কোন বই কিংবা আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি কিছুই চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক, এটাও আমার কামনা নয়। কারণ, আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। কারণ, আমি তো আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। তবে আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যত কষ্ট, আঘাত, বাধা আসুক না কেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছে; তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। একদিন উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই, ইনশাল্লাহ!