মামলাজট কমাতে শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। মামলার তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা কম হওয়াতেই এই নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। বিচারপতি নিয়োগটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও মামলা জট কমানোর স্বার্থেই বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ৫ জন বিচারপতি রয়েছেন। আপীল বিভাগে ২৩ হাজার ৬১৭টি মামলা রয়েছে। সেই পরিসংখ্যানে আপীল বিভাগে একজন বিচারপতির গড়ে মামলা ৪ হাজার ৭২৩টি। আইনজীবীগণের অভিমত এত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে দ্রুত আপীল বিভাগে আরও বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আপীল বিভাগ ঠিকভাবে চলা শুরু করুক। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হোক। তারপর দেখা যাবে। বিচারপতি নিয়োগ একটা চলমান প্রক্রিয়া। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, মামলা জট নিরসনে আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। আপীল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি থাকার কারণে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আপীল বিভাগের মাত্র একটি বেঞ্চ রয়েছে। সেখানে প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতি কাজ করছেন। আমি আশা করছি, সহসাই আপীল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ করা হবে, তখন এ বেঞ্চ বাড়বে এবং মামলার শুনানি হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই থমকে আছে। অন্যদিকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, বর্তমানে মহামারী করোনাকালীনও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় আপীলেট ডিভিশনে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আপীলেট ডিভিশনে বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসর নেয়ায় বর্তমানে বিচারক সংখ্যা ৫ জনে নেমে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা দেখে আসছি এ সংখ্যা ১১ জন পর্যন্ত থাকে। এই অবস্থায় বিচার প্রার্থীদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি ও রায় প্রদানের স্বার্থে বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের আপীলেট ডিভিশনে দ্রুত বিচারপতি নেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে আমি মনে করি।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আপীল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতে পারে। তবে আপাতত এই মুহূর্তে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ নাও হতে পারে। কারণ হাইকোর্টের চেয়ে আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ বেশি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। করোনাকালে উচ্চ আদালতে পাহাড়সম মামলা জট ও বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার কারণে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের তাগিদ দিয়েছে আইন বিশেষজ্ঞগণ। আপীল বিভাগে যেখানে ১১ বিচারপতি ছিলেন সেখানে বর্তমানে আছেন প্রধান বিচারপতিসহ ৫ জন। অন্যদিকে হাইকোর্টে আছেন ৯১ জন বিচারপতি। গত ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এর সদস্য বিচারপতি আমির হোসেন মারা গেছেন। হাইকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আরও কয়েক জন অবসরে যাবেন। বিচারপতি সঙ্কট থাকলেও উভয় বিভাগে প্রতিদিন মামলা জট বাড়ছে।
সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে ২৩ হাজার ৬১৭টি মামলা আর হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি মামলা। সে পরিসংখ্যানে আপীল বিভাগে একজন বিচারপতির গড়ে মামলা ৪ হাজার ৭২৩টি আর হাইকোর্টে ৫ হাজার ৩৭৪টি মামলা। এত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে উভয় বিভাগে আরও বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। সর্বশেষ আপীল বিভাগে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দুই বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার আগে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে আপীল বিভাগে মামলার চেয়ে বিচারপতির সংখ্যা কম। সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রীমকোর্ট গঠিত হইবে।’ সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।’
এর আগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ৭টি পর্যবেক্ষণ ও আইন কমিশন ৬টি সুপারিশ দিয়েছিল সরকারের নিকট। সম্প্রতি আপীল বিভাগ থেকে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী অবসরে গেছেন। বর্তমানে পাঁচ বিচারপতি আপীল বিভাগের একটি বেঞ্চে বিচার কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এই পাঁচজন হলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপীল বিভাগে অন্য মামলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যুদ্ধাপরাধের মামলা রয়েছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে সুপ্রীমকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করার জন্য দিকনির্দেশনা বা নীতিমালা প্রণয়নের বিচারক নিয়োগের দিক নির্দেশনা (গাইডলাইন) চেয়ে করা একটি রিট আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। পর ২০১৭ সালের ২ মে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন। ওই রায়ে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার জন্য সাতটি শর্তসহ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাতটি যোগ্যতা নির্ধারণসহ বেশ কিছু মতামত দিয়েছেন আদালত।