বিশ্বনাথে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য, ২ বৃদ্ধ কারাগারে

15

স্টাফ রিপোর্টার :
বিশ্বনাথে মখলিছুন বেগম (৩২) নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের আবদুস সালামের কন্যা। গত শনিবার দিবাগত রাতে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই নারী। এ ঘটনায় ২ বৃদ্ধকে আটক করে রবিবার জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
তারা হলেন, উপজেলার সত্তিশ গ্রামের রইছ আলী (৫৮) ও উপজেলার মির্জারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কমলা মিয়া (৬০)।
জানা যায়, মখলিছুন বেগম স্বামীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর থেকে ২ সন্তান নিয়ে নিজের বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। বাবা দরিদ্র হওয়ায় তিনি লামাকাজি বাজারের নৈশপ্রহরী মির্জারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কমলা মিয়ার বাসায় বেশ কিছুদিন গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। এর সুবাধে কমলা মিয়া তার সত্তরোর্ধ্ব বেয়াই উপজেলার সত্তিশ গ্রামের রইছ আলীর সঙ্গে মখলিছুনকে বিয়ে দেওয়ার ফন্দি আটেন এবং নানা প্রলোভন দেখিয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রইছ আলীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু বিয়ের চারদিনের মাথায় রইছ আলী জানতে পারেন, তার নববিবাহিতা স্ত্রী মখলিছুন বেগম অন্তঃসত্ত্বা। পরে দুই বেয়াই মিলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তার গর্ভপাত করান। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রইছ আলী মখলিছুন বেগমকে ঘরে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তাকে পিতার বাড়িতে রেখে যান দুই বেয়াই। একপর্যায়ে মখলিছুন বেগমের শারীরিক অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যায়। গত শুক্রবার তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় ফের হাসপাতালে পাঠান তার বাবা। ওইদিন রাতেই কমলা মিয়া ও তার বেয়াই রইছ আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন শনিবার ভোর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মখলিছুন বেগম। রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
মখলিছুন বেগমের বাবা আব্দুস সালাম জানান, মেয়েকে বাড়িতে রেখে চাকরিসূত্রে তিনি শাহপরান এলাকায় থাকেন। আর এই সুযোগে তার অজান্তেই মেয়ে মখলিছুন বেগমকে কমলা মিয়ার সঙ্গে অবৈধভাবে বিয়ে দেন রইছ আলী। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সূত্রে তিনি খবর পান তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে গিয়ে দেখেন মখলিছুন বেগম বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন। আব্দুস সালাম তৎক্ষণাত স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালামকে খবর দিলে রাত ১০টার দিকে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ধর্ষণ করে মেয়ে মখলেছুন বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আব্দুস সালাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, আব্দুস সালাম ও আমি মামলা দায়ের করতে বিশ্বনাথ থানায় যাই। এ সুযোগে এক অজ্ঞাতনামা নারী অভিভাবক পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে মখলিছুনের লাশ নিয়ে লামাকাজীর উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং পথিমধ্যে সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকায় ওই অজ্ঞাতনামা নারী এ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম ও আমি হঠাৎ খবর পাই, লামাকাজীতে একজন নারীর লাশ নিয়ে একটি এ্যাম্বুলেন্স অনেকক্ষণ ধরে ঘুরাঘুরি করছে। পরে সেটি স্থানীয় জনতা আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম ও আমি লামাকাজীতে গিয়ে মখলিছুনের লাশ শনাক্ত করি। পরে পুলিশকে খবর দেই।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী আতাউর রহমান লেন, এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, মখলিছুনকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না বা তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা ময়না তদন্তের পর বলা যাবে।