বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতন ॥ চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হতে পারে আজ

14

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে চাঞ্চল্যকর নিহত রায়হান আহমদ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) প্রস্তুত করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ বুধবার তা আদালতে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন পিবিআই সিলেটেরে পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান।
নগরীর আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ হত্যাকান্ডের ৭ মাস পেরোতে চলছে। এই দীর্ঘ সময়েও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগপত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে বলেও একমাস পার করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে রায়হানের পরিবারের মধ্যে। তবে দীর্ঘদিন পর তদন্ত প্রস্তুত হওয়ায় খবরে খুশি রায়হানের মা সালমা বেগম। ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে নগরী আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ। নগরী কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে তাকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। কয়েক ঘণ্টা চলে পাশবিক নির্যাতন। পরে ভোরে রায়হানের নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করে পুলিশ। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতারে দাবিতে চলে নানা কর্মসূচি। ১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রায়হানের স্ত্রী।
রায়হানের মা সালমা বেগম জানান, দেরিতে হলেও মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) প্রস্তুতের খবরে খুশি রায়হানের পরিবার। দ্রুত বিচারকাজ শুরু করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।
আলোচিত এ মামলাটির আসামি পুলিশ হওয়ায় একটি নির্ভুল, ক্রটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য চার্জশীট তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, করোনার বিরূপ পরিস্থিতি ও নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তবে, চলতি মাসেই অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলেন জানান এই কর্মকর্তা।
পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সাথে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বরখাস্ত হওয়া টু আইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হবে। তবে রায়হান হত্যার পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কথিত সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এই ৬ জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস।
উল্লেখ্য, নগরীর আখালিয়ার নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে গত বছরের ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। এরপর টাকার দাবিতে তাকে রাতভর ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায় পুলিশ। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন।
এর আগে রায়হান হত্যার পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবকারী কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান এখনও পলাতক রয়েছে।