তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে

14

প্রযুক্তিগত সেবার মান করোনার ক্রান্তিকালে আমাদের ইতিবাচকভাবে সহায় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রত্যয় ব্যক্ত হলে সময়ের অনিবার্য দাবি মেটাতে তা কতখানি প্রয়োগ করা যাবে তা নিয়ে দ্বিধা-সংশয় তো ছিলই। তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের সুবর্ণ সময়ে আমরা কতখানি বৈজ্ঞানিক নতুন অধ্যায়কে স্বাগত জানাতে পারব তাও অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় ছিল। প্রযুক্তির বলয় কিংবা ভার্চুয়াল জগতটা অচেনা-অজানা এক পরম বিস্ময়। কোন অভিজ্ঞতা ছিল না, অভ্যস্ততা তো নয়ই। করোনার বহুল সংক্রমণ তার সর্বগ্রাসী বিস্তার নিয়ে হানা দিলে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও স্থবিরতার কঠিন জালে আবদ্ধ হয়। সামাজিক দূরত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিকে অতিমাত্রায় আমলে নেয়া তৎকালীন সময়ের এক অনিবার্য বিধি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মানুষের সশরীরে উপস্থিতি ব্যতিরেকে যে নতুন কর্মযোগ শুরু হলো সেখানে যখন ঘরে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্ত দাফতরিক কার্যক্রম সম্পন্ন হতে লাগল। বাস্তব প্রেক্ষাপটে তেমন বৈজ্ঞানিক সংযোগ মানুষকে যখন নতুন প্রযুক্তির জগতে সম্পৃক্ত করল তাও যেন করোনা দুর্যোগ এক অভাবনীয় বিপ্লব বটে। স্থবিরতার চরম আকালে আমরা যে মাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তির বলয়ে নিঃশর্তে সমর্পিত হতে পারছি প্রাসঙ্গিক কর্মযোগের ধারাবাহিকতায় তাও বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা মুগ্ধতারও আবেশ পেয়েছি।
অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির সদৃদ্ধ সময় থেকেই আমরা উপভোগ করছি। করোনার দুর্বিপাকে তা আরও সর্বজনের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জগতের বহুল উন্মোচন করোনাকালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এভাবেই আমরা বৈজ্ঞানিক নতুন নতুন যাত্রাপথের অংশীদারিত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে খুব বেশি পিছু হটব না। গত দশ মাসে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ আর গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটিরও বেশি।
যে শিক্ষা কার্যক্রমের অনভিপ্রেত দুঃসময় ভর করেছে সেখানেও যতটুকু স্বস্তি সবটাই তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। কারণ অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রম প্রযুক্তির সম্প্রসারিত সেবায় খুব বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় যেতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণীপাঠের কার্যক্রমে অতিমাত্রায় স্বস্তি না পেলেও অংশীদারিত্বের কমতি ছিল না বলাই যায়। শিক্ষা কর্মযোগের সঙ্কট অবধারিত থাকত যদি তথ্যপ্রযুক্তির আঙিনায় পাঠ্যক্রমকে সম্পৃক্ত করা না যেত। শুধু বাংলাদেশ নয়, তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় সারা বিশ্ব এখন মানুষের হাতের নাগালে। এই অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক শক্তির এমন চমৎকার অভিযোজন প্রত্যেকের মাঝে, শিশু থেকে আবাল-বৃদ্ধ সর্বস্তরে। তবে কিছু কমতি তো এই বলয়কে সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে। তা কিন্তু তরঙ্গের অপর্যাপ্ততা। এমন ঘাটতি কমাতে পারলে বলয়টি আরও সর্বজন সম্প্রসারিত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।