তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাটে অবহেলায় শহীদ সিরাজের সমাধি

27
তাহিরপুর মেঘালয় পাহাড় পাদদেশে ট্যাকেরঘাটে শহীদ সিরাজের সমাধিস্থল।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও জঙ্গলই রয়ে গেলো শহীদ সিরাজের সমাধি স্থল। দিনে দিনে আগাছা আর বন জঙ্গলে সিরাজের শেষ স্মৃতিচিহ্ন টুকু নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের পরিত্যক্ত কোয়ারীর নাম শহীদ সিরাজের নামে নামকরণ হলেও শহীদ সিরাজের সমাধির খবর রাখছে না কেউ। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশমাতৃকার টানে কিশোরগঞ্জ থেকে ছুটে এসেছিলেন তাহিরপুরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, দেশ মাতাকে বাঁচাতে।
শহীদ সিরাজের সাথে সাব সেক্টরের যোদ্ধা তাহিরপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রৌজ আলী জানালেন একজন সাধারণ সিরাজের অসামান্য বীরত্বগাঁথা। এখনো গল্পের ছলে তাহিরপুরের লোকজনের মুখে মুখে ফেরে। কে সেই সিরাজ ?
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ছিলানী গ্রামে জন্ম সিরাজুল ইসলামের। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম। লেখা পড়া করছিলেন গুরুদয়াল কলেজে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তিনি তার গ্রাম থেকে কয়েক জন যুবক কে নিয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ট্রেনিং নিতে চলে যান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালাট ক্যাম্পে। গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান আসাম রাজ্যের ইকুয়ানে। প্রশিক্ষণ শেষ করে মেজর শওকত আলীর অধীনে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সাব সেক্টর ট্যাকেরঘাটে। যুদ্ধ চলাকালে পাক বাহিনীর নানা রসদ পাঠানো হতে নদী পথে। নদী বন্দরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো সাচনা জামালগঞ্জ নদী বন্দর। নদী বন্দরগুলো মুক্ত করার জন্য মিত্র বাহিনীর মেজর বাট ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৩৬ জন চৌকস মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি এডভান্স পার্টি। পার্টির অগ্রবাগের দায়িত্ব পালন করেন সিরাজুল ইসলাম। ১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ট এডভান্স পার্টি সন্ধ্যের পরপরই শুধুমাত্র ত্রি-নট থ্রি রাইফেল আর কিছু গ্রেনেড নিয়ে কমান্ডার সিরাজের নেতৃত্বে ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টর হতে ২৫ মাইল দক্ষিণে সাচনা বাজার পৌঁছে পাক হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ব্যাংকারে গেরিলা আক্রমণ করে তার দল। অতর্কিত হামলায় ব্যাংকারে অবস্থানরত পাক বাহিনীদের মৃত্যু হয় সেই সাথে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আনন্দে লাফিয়ে উঠেতার দল নিয়ে জয়বাংলা শ্লোগানে প্রকম্পিত করেন চারপাশ এমন সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেট তার চোখে বিদ্ধ হলে সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শহীদ সিরাজুল ইসলামের মৃতদেহ তার সহযোদ্ধারা নিয়ে আসেন ট্যাকেরঘাট সাবসেক্টরে। সেখানেই সমাহিত করা হয় তাঁকে। স্বাধীনতার এত বছর পর একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন অনেকেই। অনেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবেসে শহীদ সিরাজের কিছু স্মৃতি আওরান, আর এভাবেই হারিয়ে যাওয়ার পথে একজন বীর বিক্রমের যুদ্ধদিনের গল্প ও তার সমাধি চিহ্ন।