একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় রাও ফরমান আলীর সম্পৃক্ততা

23

গাজীউল হাসান খান

আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসটি পালিত হলেও বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং হত্যার বিষয়টি শুরু হয়েছিল আরো কয়েক মাস আগে থেকে। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, একাত্তরের ২৫শে মার্চের পর পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনী তাদের এ দেশীয় দালালদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে গঠন করেছিল বেশ কিছু বেসামরিক বাহিনী। এদের প্রায় সবাই ছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘ থেকে সংগৃহীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে রাজাকার কিংবা সাধারণ মুজাহিদ বাহিনী ছাড়াও ছিল একটি বিশেষায়িত আলবদর বাহিনী। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি আর্মি গঠিত এই বাহিনীটি ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি সশস্ত্র ‘কিলিং স্কোয়াড’ বা রাজনৈতিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে হত্যা করার বেসামরিক বাহিনী। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত ও হত্যা করার জন্য জামালপুরে ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে একাত্তরের এপ্রিলে গঠন করা হয়েছিল আলবদর বাহিনী এবং স্থাপন করা হয়েছিল সাতটি ক্যাম্প। আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মওলানা মতিউর রহমান নিজামী একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তান আলবদর বাহিনীর প্রধান। আর পূর্বাঞ্চলের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। পূর্ব পাকিস্তানে আনুষ্ঠানিকভাবে আলবদর বাহিনী গঠন করার পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ অবদান ছিল বলে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এই বাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত তৎকালীন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান। এবং তাঁকে সাহায্য করতেন তৎকালীন সিভিল আর্মড ফোর্সের অপর উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার জেনারেল জামসেদ।
পেশাগত জীবনের সূচনায় তরুণ রাও ফরমান আলী একজন চৌকস ও সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল অফিসার হিসেবে ওপরমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাকিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীর স্বার্থ নিয়ে তাঁর ছিল বিশেষ উৎসাহ। পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তানি জেনারেলদের মধ্যে রাও ফরমান আলী সবচেয়ে বেশিদিন বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন। একপর্যায়ে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় ছিলেন। সামরিক বাহিনীতে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক প্রশাসনের দেখাশোনা করেছেন সবচেয়ে বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে রাও ফরমান নিজেই উল্লেখ করেছেন। সে কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠার আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল হামিদ তাঁকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে রাজনৈতিক বিষয়াদি দেখার ভার দিয়েছিলেন। ফরমান আলী তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, ফজল মুকিম খান ও টিক্কা খানের একজন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত অফিসার ছিলেন। জেনারেল নিয়াজির সঙ্গেও যুদ্ধের সময়ে তিনি কাজ করেছেন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে পুরো সত্তর ও একাত্তরের সূচনায় পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি উত্তাল তরঙ্গের মতো আন্দোলিত হতে থাকে। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলন ক্রমেই স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ছিল। সে কারণে পাকিস্তান আর্মির গোয়েন্দা বাহিনী ও জনপ্রশাসন বিভাগও তাদের কর্মকৌশল দ্রুত বদলাতে শুরু করেছিল। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অসামান্য বিজয়, পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলীর ক্ষমতা হস্তান্তরে তীব্র বিরোধিতা এবং সব শেষে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ২৫শে মার্চের ‘মিলিটারি ক্র্যাক ডাউনে’ একটি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের অখণ্ডতা অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। এবং ২৫শে মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তারা পরিষ্কারভাবে একটি সশস্ত্র লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। জেনারেল ফরমান আলী ও তাঁর কিছু সহযোগী তাঁকে প্রথম প্রথম যতই ‘সিভিল ওয়ার’ বলে আখ্যায়িত করুন না কেন, শেষ পর্যন্ত তাঁরা বুঝে নিয়েছিলেন, সেটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের এক সশস্ত্র স্বাধীনতার লড়াই।
একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি আলবদর বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার এক তালিকা প্রণয়ন শুরু করেছিল। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, তার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামিক ছাত্রসংঘের উঠতি নেতা চৌধুরী মঈনউদ্দীন, আশরফুজ্জামান খান, আবদুল খালেক মজুমদার প্রমুখ। তাঁদের পরিকল্পনা মতো ১৪ ডিসেম্বরের আগেই তাঁরা সিরাজুদ্দীন হোসেন, সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ডা. আমিনউদ্দিন, সিরাজুল হক খান, আনোয়ার পাশা, মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন ও অধ্যাপক মোর্তাজাসহ অনেককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শেষের দিকে। স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর দেশ মুক্ত হওয়ার পর শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান নিজেই উধাও হয়ে যান। নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী আলবদরদের হাতে ১০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাঁচজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, দুজন প্রভাষক ও ২৬ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন। তা ছাড়া দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের অগণিত সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর হাতে তখন পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের অনেককে আটক অবস্থায় বিজয় দিবস আসার আগেই হত্যা করা হয়েছিল। তবে বেশির ভাগকে ১৪ ডিসেম্বরের দু-এক দিন আগে। তা ছাড়া ঢাকার বাইরেও রাজনীতিকসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাষা আন্দোলনখ্যাত কুমিল্লার বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তালিকাভুক্ত অনেককে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সামরিক অফিসাররা বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, তাঁদের কেউ আর ফিরে আসেননি। ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী এই অপারেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান। যদিও তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন যে রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীসহ সিভিলিয়ানদের কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না; কিন্তু কোনোভাবেই শেষ পর্যন্ত সে অভিযোগ তিনি খণ্ডন করতে পারেননি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখা ডায়েরি থেকেও এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। তা ছাড়া জামায়াত নেতা গোলাম আযম, নেজামে ইসলামীর মওলানা ফরিদ আহমদ ও বিশেষ করে মুসলিম লীগ নেতা নূরুল আমীনের পরামর্শে রাও ফরমান ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় শান্তি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং বিশেষ করে তাঁরই নির্দেশে আলবদর ও রাজাকারদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো।
একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে বাঙালি বুদ্ধিজীবীসহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের পৈশাচিক ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড এবং গেরিলাযুদ্ধে অপমানজনক পরাজয়ের জন্য পাকিস্তানি জনগণের কাঠগড়ায় তখনকার দায়িত্ব পালনরত জেনারেলদের অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ‘সে অপরাধবোধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অনেক জেনারেলই তাঁদের লিখিত বইপুস্তকে একাত্তরের যুদ্ধে নিজেদের সাফাই গাইতে চেষ্টা করেছেন। জেনারেল রাও ফরমান আলী তাঁর ব্যতিক্রম নন।’ সে সময় রাও ফরমান ‘ How Pakistan Got Divided ’ নামে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত বই প্রকাশ করেছিলেন। সে বইটি পরে ঢাকা থেকে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড বাংলাদেশের জন্ম নামে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করে। তাতে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক মামুন। রাও ফরমান তাঁর পেশাগত জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। সে সূত্র ধরে তাঁর প্রকাশিত পুস্তকে তিনি বলেছেন, ‘অন্য অনেকে যা দেখেছেন বা দেখতে পেয়েছেন, আমি তার চেয়ে অনেক বেশি দেখেছি।’ তিনি এ-ও বলেছেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তা ছাড়া আতাউর রহমান খান ও মশিউর রহমান যাদু মিয়ার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। তাঁর লিখিত পুস্তকে রাও ফরমান বলেছেন, ২৫শে মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ ব্যাপারে জেনারেল হামিদ ও জেনারেল ফরমান ইচ্ছুক ছিলেন না। অথচ অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে তদানীন্তন সিভিল সার্জেন্ট হাসান জহির তাঁর লিখিত ‘ The separation of East pakistan ’ বইয়ে বলেছেন, ‘মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিলেন অপারেশন সার্চলাইট অর্থাৎ ২৫শে মার্চ ঢাকা অংশের কালরাতের বিভীষিকার হোতা।’ অধ্যাপক মামুন বলেছেন, ‘ফরমান অন্যান্য পাকিস্তানি জেনারেলের মতোই সত্য গোপন করেছেন। ফরমান লিখেছেন, ‘কথা ছিল ২৫শে মার্চ শুধু নেতাদের ধরা হবে এবং কোনো রক্তপাত হবে না। এই নির্দেশও ছিল ইয়াহিয়া করাচি না পৌঁছা পর্যন্ত যেন অপারেশন শুরু করা না হয়। কারণ তাদের ধারণা ছিল, তাহলে ভারতীয় জঙ্গিবিমান প্রেসিডেন্টের প্লেন আটকে দিতে পারে।’ ফরমান আরো বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে রক্তপাত ছাড়াই হয়তো একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছা যেত; কিন্তু জেনারেল নিয়াজি চেয়েছিলেন অন্য রকম। নিয়াজির ধারণা ছিল তৎকালীন বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাঙালিদের জয় করা সম্ভব হবে না। ‘ He wanted to change the racial character of the Bengalees ’, অর্থাৎ নিয়াজি চেয়েছিলেন বাঙালিদের সম্প্রদায়গত চরিত্র বদলে দিতে। ফরমান বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কখনো নিয়াজির মতের মিল কিংবা বনিবনা হয়নি। নিয়াজি নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করতেন। ভাবতেন তাঁর নেতৃত্বে তখন কলকাতা দখল করাও সম্ভব হতে পারে।
নিয়াজির বিরুদ্ধে এত কিছু বলা সত্ত্বেও ফরমান সে দীর্ঘ সংঘাতময় সময়টি নিয়াজি ও টিক্কা খানের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাঁদের নির্দেশ বিনা বাক্যে বাস্তবায়িত করেছেন। এবং অনেকের মতে, আর্মির তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান হিসেবে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ ও পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদন ছাড়া সম্ভব হতো না। পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানো ও বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে জনপ্রশাসনের প্রধান হিসেবে ফরমান কতটুকু জড়িত ছিলেন সে প্রশ্ন আজও প্রাসঙ্গিক এবং তদন্তসাপেক্ষ। ফরমান নিজের দায়দায়িত্ব কিংবা অপরাধ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে বলেছেন, ‘পাকিস্তান এক ছিল। যেকোনো কারণেই দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে, যার জন্য মূলত রাজনীতিবিদরাই দায়ী। দুই পক্ষই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। পাকিস্তান ভাঙার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু ও ভুট্টোকে দায়ী করেছেন। অথচ তিনি বহুবার বলেছেন যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে পাকিস্তান ভাঙার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে কিভাবে দায়ী করতে পারলেন? অধ্যাপক মামুন বলেছেন, ফরমান কিছু সত্য, কিছু অর্ধসত্য ও কিছু মিথ্যা মিলিয়ে বইটি রচনা করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল এ কথা বলা যে পূর্ব পাকিস্তানে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে তার সঙ্গে ফরমানের কোনো যোগ নেই। কারণ তিনি যুক্ত ছিলেন বেসামরিক কাজের সঙ্গে। অথচ ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে ফরমান জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামুদুর রহমান কমিশনও এই অভিযোগের বিচার করেছিলেন। তাতে ফরমান বলেছেন, ‘তিনি তো ননই, পাকিস্তান বাহিনীও নয়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল মুক্তিবাহিনী অথবা ভারতীয় বাহিনী। সেসব কারণে যুদ্ধবন্দি হিসেবে পাকিস্তানে ফেরত গেলে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো রাও ফরমান আলীকে পদোন্নতি দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পুনর্নিয়োগ দিয়েছিলেন। ২০ জানুয়ারি ২০০৪-এ রাও ফরমান আলী পাকিস্তানে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু গণহত্যা ও বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় থেকে তিনি আজও মুক্ত হতে পারেননি। এরই মধ্যে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস’ পালন করা শুরু হয়েছে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করেছে এবং তা আমাদের সংবিধানেও সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, একদিন সেই ট্রাইব্যুনাল বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল হোতাদের বিচার করতে সমর্থ হবে।