এসএমপির ৬ থানার ১১টি পুলিশ ফাঁড়ির ৮টিতেই নেই সিসি ক্যামেরা ॥ সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কিংবা মনিটরিং কেন্দ্রীয়ভাবে করা হলে অনেক অপরাধই কমে আসবে

17

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেটের ৬ থানা নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন (এসএমপি) পুলিশ গঠিত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে এই ৬ থানায় আবার ১১টি পুলিশ ফাঁড়ি, ক্যাম্প ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র রয়েছে। তবে তথ্য প্রযুক্তির যোগে এই ১১ পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে মাত্র ৩টি ফাাঁড়িতে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। আর বাকী ৮টিতে কোন ক্যামেরা এখন পর্যন্ত বসানো হয়নি।
ফাঁড়িগুলো হচ্ছে, কোতোয়ালী থানার আওতাধীন নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও হযরত শাহজালাল (রহ.) পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। দক্ষিণ সুরমা থানার আওতাধীন কদমতলী পুলিশ ফাঁড়ি আর কামালবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। এয়ারপোর্ট থানার আওতাধীন আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ি ও শহরতলীর কালাগুল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। শাহপরান থানার আওতাধীন শাহজালাল উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি, জালালাবাদ থানার আওতাধীন শিবেরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও মোগলাবাজার থানার আওতাধীন আলমপুর পুলিশ ফাাঁড়ি রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কোতোয়ালী মডেল থানাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই থানা এলাকায় রয়েছে ৩টি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি তদন্ত কেন্দ্র। এর মধ্যে শুধু বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে একটি মাত্র সিসি ক্যামেরা। আর বাকিগুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা বসানো নেই। দক্ষিণ সুরমা কদমতলী পুলিশ ফাঁড়ি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সেই ফাঁড়িতে রয়েছে সিসি ক্যামেরা আর আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। এসব সিসি ক্যামেরাগুলো আবার ফাঁড়ি পুলিশে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাই এসব সিসি ক্যামেরা ফাঁড়ি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে গত ১১ অক্টোবর রায়হান উদ্দিন আহমদ পুলিশী নির্যাতনে মারা যাওয়ার পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নির্যাতনকারী বরখাস্ত হওয়া ও পালিয়ে যাওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া নির্যাতনের সিসি ক্যামেরার ঐ রাতের ফুটেজ ডিলেট করে নতুন ডিস্ক পিসিতে ঢুকিয়ে রেখে যান। ফলে পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আকবর হোসেন ভূঁইয়ার ওই নির্যাতনের সিসি ক্যামেরার ধারণকৃত ফুটেজ আর পাওয়া যায়নি। যদি কোতোয়ালী থানা অথবা এসএমপি সদর দপ্তর থেকে এ সিসি ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং করা হতো তাহলে ফাঁড়ির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নানা অজুহাতে পুলিশী নির্যাতনের ঘটনাগুলো অনেকাংশে কমে আসত। শুধু তাই নয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কিংবা মনিটরিং যদি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কিংবা কোতোয়ালী থানা পুলিশ এর হাতে থাকতো তাহলে রায়হানের মতো টগবগে যুবককে মিথ্যা ছিনতাইয়ের অভিযোগে ফাঁড়িতে এনে পুলিশী নির্মম নির্যাতনে জীবন দিতে হতো না।
সিসি ক্যামেরা ফাঁড়িতে বসানোর ব্যাপারে এই ৬ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তারা বললেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সময় প্রয়োজন হবে সেই সময় ফাঁড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাবেন।
সূত্র জানায়, পুলিশ ফাঁড়ির ধরণ বুঝে সেখানে এসএমপি সদর দপ্তর থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পরিপূর্ণভাবে একটি পুলিশ ফাঁড়ি চালাতে হলে ২ জন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই), এএসআই ৫ থেকে ৬ জন ও কনেষ্টবল ১৫ থেকে ২০ জন থাকতে হয়। এছাড়া অনেক পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থাও অনেকটা ভাল না থাকায় মানুষ জন অনেক সময় পুলিশী সেবা প্রদানে বঞ্চিত হন। ফলে মানুষ অনেক সময় পুলিশের প্রতি আস্তা হারিয়ে ফেলে।
এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া)’র বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহেরের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেসব পুলিশ ফাঁড়িতে সিসি ক্যামেরা নেই সেসব পুলিশ ফাঁড়িতে শীঘ্রই সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এসব সিসি ক্যামেরাগুলো এসএমপি সদর দপ্তর, পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইপি’র মনিটরিং করবেন। আর তিনি বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান বুঝে পুলিশ দেয়া হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী পুলিশরা সেখানে ডিউতে রাখা হয়।