৩ দিন বন্ধ থাকার পর নর্থ ইষ্টে আবারো শুরু হয়েছে করোনা রোগীর চিকিৎসা

5

৩ দিন বন্ধ থাকার পর দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবারো করোনা রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা শুরু হয়েছে। একজন করোনা রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর আত্মীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করায় চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সদের অনীহার কারণে গত বুধবার থেকে করোনা সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, আলাপ আলোচনার পর করোনা ইউনিটে কর্মরতরা চিকিৎসা প্রদানে সম্মত হওয়ায় গত শনিবার থেকে আবারো রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।
নর্থ ইষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৯ মে থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ শ’ করোনা সন্দেহভাজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১শ’ ৮৩ জন মারা গেলেও বাকীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের করোনা পজেটিভ ছিল। মৃত্যুবরণকারী ৮৩ জনের মধ্যে ২৮ জন ছিলেন করোনা পজেটিভ। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে হাসপাতালের এক জন ডাক্তার ও একজন ডাক্তারের স্ত্রীও রয়েছেন। নর্খ ইষ্টে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার স্বামীর কারণে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন ঐ গৃহবধূ।
নর্থ ইষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গত মে মাসে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এই রোগের চিকিৎসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ কওে সরকার। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সে সময় করোনা সন্দেহভাজন রোগীর চিকিৎসার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন নর্থ ইষ্ট মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সে সময় হাসপাতালের যাবতীয় ব্যয সরকার বহন করবে বলে আশ্বাসও দেয়া হয়। কিন্তু, পরবর্তীতে বেসরকারী হাসপাতালকে সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসে। কিন্তু, সরকারী সহায়তা না পেলেও মানবিক কারণে করোনা রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসা প্রদানের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন নর্থ ইষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে, এ বছরের ২৯ মে থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়। প্রথম দিনেই ৮ জন করোনা রোগী ভর্তি হন এই হাসপাতালে। যারা করোনার লক্ষণ নিয়ে এই হাসপাতালে আসেন, তাদেরকে প্রথমে ‘করোনা সাসপেক্টেড’ ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর পিসিআর টেস্টে পজেটিভ আসলে তাদেরকে করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গত ৪ মাসে যে প্রায় ১১শ’ রোগীকে করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে ভর্তি করা হয়েছিল, তাদের এক তৃতীয়াংশের করোনা পজেটিভ আসে। এদের মধ্যে যে ১শ’ ৮৩ জন মারা গেছেন, তারা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। আগে থেকে চিকিৎসার জন্য আসলে হয়তো মুতের সংখ্যা আরো কম হত।
তিনি জানান, করোনার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য দিনে প্রায় ৪৮ হাজার ঘণ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়। এতে বিশাল অর্থ খরচ পড়ে। কিন্তু, রোগীর কাছ থেকে অক্সিজেনের জন্য ঘন্টায় মাত্র ৩শ’ টাকা চার্জ করা হয়। এছাড়া ১১টি এন্টি ভাইরাল ইনজেকশন দিতে হয়, যার প্রতিটির দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ডাক্তার বা নার্স যারা এই ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের প্রত্যেকের পিপিই, মাস, শিল্ডসহ অন্যান্য আনষাঙ্গিক খরচ পড়ে প্রতি ৮ ঘন্টায় প্রায় ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন রোগীর জন্য সপ্তাহে খরচ হয় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা। যেসব ডাক্তার এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরকে মাসে ১ লাখ টাকা ও নার্সদেরকে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হচ্ছে। ডাক্তার ও নার্সদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু, সে অনুযায়ী রোগীদের কাছ থেকে বিল নেয়া যায়নি। অনেককে ফ্রি চিকিৎসাও দিতে হয়েছে। ফলে, গত ৪ মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্ইাড লাইন অনুযায়ী করোনা ইউনিটের জন্য সরঞ্জাম কিনতে হয়েছে আরো প্রায় এক কোটি টাকার। এত বিশাল লোকসান সত্বেও নর্থ ইস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে চলেছে।
তিনি বলেন, করোনা ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে আামদের রেডিওলজি ও এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান, গাইনী বিভাগের ৩ জন চিকিৎসকসহ অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হন। ফলে, আতঙ্ক রয়েছে সবার মাঝে। এছাড়া, নানামুখী সমালোচনার কারণে করোনা ইউনিটে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা চিকিৎসা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় গত বুধবার থেকে করোনা সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তারা আবারো কাজে যোগ দেয়ায় শনিবার থেকে আবারো করোনা সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। (খবর সংবাদদাতার)