নর্থ ইস্ট হাসপাতাল টাকার জন্য ৫ ঘণ্টা আটকে রাখলো লাশ, করোনা নেগেটিভ রোগীকে করোনা ওয়ার্ডে রেখে বিল আদায়

35

স্টাফ রিপোর্টার :
আবারো আলোচনায় নর্থ ইস্ট হাসপাতাল। এবার বিল দিতে না পারায় মৃত্যুর দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রাখলো লাশ। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ হওয়ার পরও ওই ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ ইউনিটে রেখে চিকিৎসা প্রদান এবং এর সুযোগে গলাকাটা বিল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সিলেট দক্ষিণ সুরমার উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের উলালমহল গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬০) গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা ইউনিটে নিয়ে যেতে চাইলে স্বজনরা ‘করোনা নেগেটিভ’ রিপোর্ট দেখান। তবু স্বজনদের কথা উপেক্ষা করে কর্তব্যরতরা রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে না রেখে করোনা ইউনিটে নিয়ে যান।
মৃত নাসির উদ্দিনের ভাতিজা আব্দুল বারী জানান, গত ৩০ আগষ্ট তার চাচার শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয় এবং সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা শেষে পরদিন রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
এদিকে, রোগীকে করোনা ইউনিটে নিয়ে পজিটিভ রোগীর মতোই চিকিৎসা প্রদান করা হয়। শুক্রবার রাতে রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকে করোনায় মুমূর্ষু রোগীর মতো রক্তের প্লাজমা দেয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তবে স্বজনরা সম্মত না হলে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোররাত ৪টার দিকে নাসির উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনদের হাতে ৭৭ হাজার ৪ শ ৭২ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিলে শুধু পিপিই এবং সুরক্ষাসামগ্রী বাবদ প্রতিদিন ধরা হয় ৪ হাজার ২ শ ৫০ টাকা।
বড় অংকের বিল এবং গভীর রাত হওয়ার কারণে স্বজনরা টাকা বকেয়া রেখে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে কর্তৃপক্ষ লাশ দেয়নি। ওই সময় সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল হাসপাতালে কর্তব্যরতদের ফোনে সুপারিশ করে বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- সকালে ব্যাংক খুললেই আপনাদের টাকা নিজে এসে পরিশোধ করে যাবো। এখন দয়া করে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তাদের দাফন-কাফনের সুযোগ দিন।’
কিন্তু আব্দুল জব্বার জলিলের সেই অনুরোধও রাখেননি হাসপাতালে কর্তব্যরতরা। পরে সকাল ৯টায় আব্দুল জব্বার জলিল হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিলের টাকা পরিশোধ করার পরই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, টাকার জন্য লাশ আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগটি সঠিক নয়। বরং আমরা মৃতদেহ দিয়ে দিতেই চেয়েছি, কিন্তু ওই সময় লাশ হস্তান্তর করার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, করোনা ইউনিটে বিল বেশি আসাটাই স্বাভাবিক। এক রোগীর বিপরীতে একদিনে ৩টি পিপিই ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও রয়েছে আনুষাঙ্গিক ব্যয়বহুল বিষয়।
ডা. নাজমুল বলেন, অনেক সময় রোগীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও কোভিড-১৯ এর ইউনিটে রেখেই চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। কারণ- হয়তো পরে দেখা গেলো দ্বিতীয়বারের টেস্টে রোগী পজিটিভ। এছাড়াও মাঝে-মধ্যে করোনার রিপোর্ট ভুলও আসে। তাই সাবধানতাবশত: এমন রোগীকে করোনা ইউনিটে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হয়।