দলই চা বাগান ফের বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ

10

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগান ফের বন্ধ ঘোষণা করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে চা শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘ ২২ দিন পর বুধবার (১৯ আগষ্ট) বাগান চালু হওয়ার নোটিশ টাঙানো হলেও একদিন পর বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বাগান বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৯ আগষ্ট) বাগান খোলার কথা থাকলেও সকাল থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মূলত বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না হওয়া ও বাগান চালুর নোটিশে শ্রমিকদের দায়ী করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। বুধবার সকাল ১০ টায় কোম্পানির এজিএম বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এ সময় দুই নারী শ্রমিককে টানা হেঁচড়া করে লাঞ্ছিত করায় গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে টানা চার ঘণ্টা এজিএম খালেদ খানকে অবরুদ্ধ করেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ দিন পর গত বুধবার চা বাগান চালু নোটিশ দেয়া হলেও চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার না করে, ম্যানেজমেন্ট নোটিশের শুরুতেই শ্রমিকদের বেআইনি আন্দোলনের ফলে বন্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সম্মুখে জড়ো হন। তারা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন।
তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকাল ১০ টায় কোম্পানির এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। এসময়ে শ্রমিকরা তাকে আপত্তি জানালে নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম (৫৫) ও ফাতেমা বেগমকে (৫০) টানা হেঁচড়া করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা বাগানের এজিএম এর গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন ও এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বেলা ১২টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু সরেজমিনে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
এর আগে সোমবার (১৭ আগষ্ট) বিকালে ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ এর উপস্থিতিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্বের দেয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর এদিন রাতেই দলই চা বাগান কোম্পানি বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করেন।
অভিযোগ করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী জানান, দীর্ঘ ২১ দিন চা বাগান বন্ধ থাকার পর সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি’র উদ্যোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সোমবার দলই চা বাগানে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের বে-আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে চা বাগান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে চা শ্রমিকদের মজুরি ও বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিষয়টি পরবর্তীতে আলোচনাক্রমে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, ব্যবস্থাপক আপাতত দলই চা বাগানের বাহিরে থেকে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকারও সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্তে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরা একমত হন। তবে গত সোমবার রাতের আঁধারে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দলই চা বাগানে পুলিশ প্রহরায় অনুপ্রবেশ, বুধবার এজিএম কর্তৃক দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ও বৃহস্পতিবার ফের বাগান বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিতর্কিত এই ব্যবস্থাপককে রাতের আঁধারে চা বাগানে প্রবেশ করিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করে চা শ্রমিকদের দায়ী করার পায়তারা করছে কোম্পানি।
এ ব্যাপারে দলই চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম জানান, চা শ্রমিকরা বহিরাগতদের নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও অস্থিতিশীল করে তুললে বৃহস্পতিবার ফের দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। একটি চক্র চা বাগানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। এটি মোটেও কাম্য নয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, দলই চা বাগান বৃহস্পতিবার ফের বন্ধ ঘোষণার করা হয়েছে। তবে বাগানের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।