বরখাস্ত-বদলির মুখে স্বাস্থ্যের ১২ কর্মকর্তা!

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহাপরিচালকের পদত্যাগের পর এবার বড় ধরনের রদবল  আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে নানা ইস্যুতে বিতর্কের জন্ম দেয়া এবং বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করা হতে পারে। বরখাস্তও হতে পারেন কেউ কেউ। এই তালিকায় ডজনখানেক কর্মকর্তা থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। খুব শিগগির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
মহাপরিচালকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাইসেন্স ও মানহীন হাসপাতাল ও সমালোচিত সংগঠনের সঙ্গে করোনার নমুনা পরীক্ষার চুক্তি করার অভিযোগ আছে। মাস্ক কেলেংকারি, শুরুর দিকে করোনা নিয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এছাড়াও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয় নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়। যা নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি। শোকজও করা হয় মহাপরিচালককে।
অন্যদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদসহ ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইতিমধ্যে দুদকের একটি টিম অধিদপ্তরে হানা দিয়েছে। সেখান থেকে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তিসহ নানা তথ্যাদি সংগ্রহ করেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবুল কালাম আজাদ। যদিও এখনো তা গৃহীত হয়নি, তবে প্রক্রিয়াধীন আছে। মহাপরিচালকের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টা না পার হতেই এমন রদবদলের খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ( হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসানকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। মো. সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সব থেকে বড় অভিযোগ তার বিরুদ্ধেই উঠেছে। জানা গেছে, ইতিমধ্যে তার বিষয়ে সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত কাগজ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছে। তিনি স্বাক্ষর করলেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
ডা. আমিনুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হতে পারে এমনটাও শোনা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (হাসপাতাল) বদলি করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এটি কেবল পরিচালক হাসপাতাল শাখা নয়, যে শাখাগুলো বেশি সমালোচিত হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সরকার শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজি হেলথ কেয়ারের কেলেংকারির ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংস্কারের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাদিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমপক্ষে ডজনেরও বেশি কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের বদলি কিংবা বরখাস্ত করা হবে বলে সূত্র জানায়।
করোনা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাজে সমন্বয়হীনতা আগে থেকে থাকলেও সেটা প্রকাশ্যে আসে রিজেন্ট হাসপাতাল এবং নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজির নজিরবিহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রতারণার পর।
এদিকে ক্রমেই অভিযোগ বাড়ায় স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করা এবং চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য সচিবও স্বাস্থ্য খাতের অরাজকতা বন্ধ করতে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানান।
তবে শুধু অধিদপ্তর নয়, এমন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য মন্ত্রণালয়েরও দায় আছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
বিএমএ সভাপতি ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতে সার্বিক অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের সবারই সরে যাওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়েরও দায় রয়েছে।
মোস্তফা জালাল বলেন, ‘কেন আমাদের গ্লাভস ঠিক থাকবে না, কেন চশমা ঠিক থাকবে না। নিবন্ধন নেই পাঁচ বছর এমন হাসপাতাল কীভাবে সেটা পারমিশন পায়? যারা এত বড় ভুল করে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়াই উচিত।’