মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর পরও মরদেহ দেশে আসছে না

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বজনদের জোর দাবি থাকলেও প্রবাসে থাকা বাংলাদেশীরা করোনায় মারা যাওয়ার পর তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার কোন সুযোগ নেই। সে কারণে আপাতত মরদেহগুলো প্রবাসেই দাফন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার পর তাদের মরদেহ সেখানেই দাফন করা হয়েছে। এ সব বাংলাদেশীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানালেও আপাতত সে সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের প্রথানুযায়ীই দাফন করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, লিবিয়া, লেবাননসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দেশেই যার যার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন ও সৎকার করা হচ্ছে। করোনার বাইরে স্বাভাবিক মৃত্যুর বেলায়ও একই পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে। অথচ করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে এসব দেশে মানুষ মারা গেলে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হতো। এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বাংলাদেশী স্বজনদের। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন- তাদের সেখানেই দাফন করা হচ্ছে। শুধু করোনা আক্রান্ত ছাড়াও যারা স্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে। কেননা বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউনের অবস্থা। স্বাভাবিকের উদাহরণ এখন দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারী করোনায় অনেকটা থমকে গেছে প্রবাসীদের জীবনযাত্রা। করোনার প্রভাবে প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় কমেছে রেমিটেন্স। দেশে দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে সর্বশেষ গত বুধবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশী। তাদের স্বজনরা প্রতিদিনই ঢাকায় জনশক্তি রফতানি অফিসে এসে ভিড় জমাচ্ছে। তাদের মরদেহ আনার বিষয়ে জটিলতার বিষয়ে বুঝানো হলেও আবেগবশত তবুুও অপেক্ষায় থাকে। অনেকে না জেনে বিমানবন্দরে গিয়ে ভিড় জমায়। এ বিষয়ে দুবাই প্রবাসী সাংবাদিক সাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রথম আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। তবে প্রথমবারের মতো ২৬ মার্চ প্রথম বাংলাদেশীর মৃত্যু সনদে নাম উঠে। এরপর থেকে নিয়মিত বাড়ছে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী আমিরাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৭০ জন। এই তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবে দেশটিতে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর হার বেশি।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রবাসীদের লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। মৃত ব্যক্তিদের দু’দিনের মধ্যেই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দেশটির ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে সমাহিত করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে লাশ দাফন হলেও করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারীভাবে তিন লাখ টাকা দেয়া হবে বলে জানান দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স মিজানুর রহমান। তিনি জানান, স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কোন দেশের নাগরিক কতজন আক্রান্ত হয়েছেন এই হিসাব না জানালেও মৃত্যুর সংখ্যা ও মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশটিতে প্রতিদিনই বাংলাদেশী শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সুস্থও হচ্ছেন। স্থানীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল মুঠোফোনে বলেছেন, গত ক’দিনেই তাদের কমিটির চার নেতা মঈন্ উদ্দিন, আইয়ুব খান, কফিল উদ্দিন, ও জাহাঙ্গীর কবির বাপ্পী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। চারজনকে মেডিক্যালে থেকে ছাড়পত্র দেবার সময় ১৪ দিনের জন্য বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। পর্যবেক্ষণ শেষ হওয়ায় তারা সকলে তাদের সুস্থতার কথা জানিয়েছেন। সুস্থ হবার পর তারা জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের কাজের সূত্রে, বিভিন্ন দেশের কাস্টমার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তবে তাদের কোথায় থেকে সংক্রমণ হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অস্বাভাবিক জ্বর, শুষ্ক কাশি, ক্লান্তি, মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, ঘ্রাণ শক্তি হারানো, এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে জরুরী স্থানীয় হসপিটালে যোগাযোগ করে করোনা পরীক্ষা করলে রিপোর্ট পজেটিভ আসায়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মেডিক্যাল আইসোলেশনে রাখা হয়।