সিয়াম সাধনার মাস

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দিন। রমজানের প্রথম ভাগের দশ দিন রহমতের। আর আমরা এখন এ রহমতের সময় অতিবাহিত করছি। ইবাদত বন্দেগী আর বিশেষ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত প্রাপ্তির অফুরন্ত সুযোগ এখনই। সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই আল্লাহর রহমত লাভ করতে হবে।
মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্তি, জানা অজানা গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের মাস মাহে রমযান। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র রমজান সম্পর্কে শুভ সংবাদ দিয়েছেন, ‘রোজাদার যে কোনো শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন, সে আল্লাহর রহমত বরকত ও মাগফিরাত হতে কোনক্রমেই বঞ্চিত হবে না। রোজা আমারই জন্য এবং আমি এর প্রতিফল প্রদান করবো। আল্লাহর এ ঘোষণায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতপক্ষে পবিত্র রমযান মাস মনের আর্দ্রতালাভ, কোমলান্তকরণ, বিনয় ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভাবধারায় উজ্জীবিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট মওসুম। এ সময়ে রোজাদারের মধ্যে আধ্যাতিœক ও দৈহিক ভাবধারা জাগ্রত হয়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে ধাবিত হয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভ করে মুক্তি ও নিষ্কৃতি প্রাপ্তদের মাঝে নিজেদের আসন প্রতিষ্ঠিত করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত কাম্য হওয়া খুবই বাঞ্ছনীয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হল না সে প্রকৃতপক্ষেই দুর্ভাগা।’ এ দুর্ভাগ্যের বোঝা মাথায় নিয়ে যারা নিজেদের জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিতে চায় তাদেরকে আজ এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে, সকলেরই মহান আল্লাহ পাকের নিকটে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এ সীমাহীন যাত্রাপথের সম্বল সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জন করে নেয়াই শ্রেয়। জ্ঞান ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ ন্যায় কল্যাণ এবং মঙ্গলময় জীবন যাপনেই আনন্দ পায়, শান্তি পায়। এ শান্তিই হোক সকলের কামনার ধন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রমজানের প্রথম দশদিন আল্লাহর রহমত নাজিলের, দ্বিতীয় দশদিন গোনাহ মাফ তথা মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন আল্লাহর আজাব থেকে নাজাতের জন্য নির্ধারিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, যারা রমযানের চাঁদের প্রথম তারিখ থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোযা রেখেছে তারা সে দিনের মতই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদেরকে নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছিলেন। অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে মানুষ যেভাবে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় রমজানের ত্রিশ দিন রোজা পালন করলে সে তেমন নিষ্কলুষ হয়ে যাবে।
পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ মাহে রমজানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবৃত করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, এটা এমন এক মাস যে প্রথম দশ দিন রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ। মাঝের দশ দিন ক্ষমা ও মার্জনা লাভের জন্য নির্ধারিত এবং শেষ দশদিন জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের উপায়রূপে নির্দিষ্ট। রোজাদারদের মাঝে এমন এক শ্রেণির লোক আছেন যারা তাকওয়া ও পরহেজগারী সম্পন্ন এবং পাপ ও বর্জনীয় কাজকর্ম হতে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদাই যতœবান। তারা সিয়াম সাধনার মাঝে কোন ভুলত্রুটি হয়ে গেলে চেতনা হওয়ার সাথে সাথেই তওবা ও এস্তাগফার করে নিজেদেরকে সংশোধন ও ত্রুটিমুক্ত করে নেন, এ শ্রেণির রোজাদারদের প্রতি রমযান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রহমতের বারী বর্ষণ হতে থাকে। তারা যখন রোজার প্রথম দশ দিন একান্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে অতিবাহিত করেন, তখন তারা আর সেই লোক থাকেন না। যেমনটি রোজা শুরু হওয়ার প্রাক্কালে ছিলেন। বরং তাদের মাঝে মুমিন সুলভ মহৎ গুণাবলী আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে যায়।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : যে লোক রমযান মাসে রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, যে লোক একটি দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডল জাহান্নাম হতে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবী কারীম (সা.) বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। সে দরজা দিয়ে শুধুই রোজাদাররাই প্রবেশ করবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের নিকট রমযান মাস সমুপস্থিত। তা এক অত্যান্ত রবকতময় মাস। আল্লাহ এ মাসে তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় শয়তানগুলো আকট করে রাখা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে লোক এ মাসে তার মহাকল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই হতভাগা। (নাসাঈ ও বায়হাকী)
সুতরাং পবিত্র রমযানে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে প্রত্যেককেই মহাকল্যাণ লাভ করা প্রয়োজন।