দুই কোটি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারিয়েছেন

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসে লাশের মিছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর সঙ্গে ধসে পড়েছে অর্থনীতিও। গড়ে প্রতি সাত জন শ্রমিকের এক জন কাজ হারাচ্ছেন। এক দিকে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, অন্য দিকে কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। সব দিক দিয়েই বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতিতেও সেই কথা উঠে এসেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু সত্তে¡ও অর্থনীতির স্বার্থে জীবনযাপন স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। নইলে অর্থনীতিকে বাঁচানো যাবে না। তিন ধাপে এ কাজ করার কথা বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৫ হাজার মানুষে। আক্রান্ত সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সির পরিস্থিতি সংকটজনক। করোনার পাশাপাশি মার্কিন মুলুকের নতুন সংকট চাকরি হারানো।
এক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট ছিল, প্রায় ৭০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা কাজ হারাতে বসেছেন। কোনো কোনো গণমাধ্যম দাবি করছিল, সংখ্যাটি প্রায় এক কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান বলছে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা কাজ হারানোর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। লকডাউন চললে আগামী কয়েক দিনে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ১৯৩২-৩৩ সালের মহা মন্দার সময়েও এত মানুষ কাজ হারাননি। মার্কিন প্রশাসনও বুঝতে পারছে, এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতি আরও সংকটজনক জায়গায় পৌঁছে যাবে।
সেকথা মাথায় রেখেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যেভাবেই হোক, জীবনযাত্রা স্বাভাবিকের পথে নিয়ে যেতে হবে এবং তার জন্য তিনটি ধাপের কথা বলেছেন তিনি। যে সমস্ত জায়গায় করোনার প্রকোপ কমেছে, বা আগে থেকেই কম ছিল সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু দোকান, স্কুল ইত্যাদি খোলা হবে। ১৪ দিন খোলা রেখে দেখা হবে তার ফলে সংক্রমণ বাড়ছে কি না। যদি না হয় তা হলে দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা হবে এবং পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হবে। তাতেও সফল হলে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক করা হবে। তবে একই সঙ্গে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কোন এলাকা খোলা হবে তা নির্ভর করবে সেই অঞ্চলের গভর্ণরের মতামতের উপর।
বস্তুত, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গভর্ণরের সঙ্গে বেশ কয়েক দিন ধরে বিতর্ক চলছে ট্রাম্পের। নিউইয়র্কের মতো বহু রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্ণররা জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেদের রাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুমতি দেবেন না। প্রেসিডেন্ট বললেও না। যার জেরে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট গভর্ণরদের মিউটিনিয়ার বা বিদ্রোহী বলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বিতর্কে অবসান ঘটালেন ট্রাম্প নিজেই। কার্যত মেনে নিলেন গভর্ণরদের বক্তব্য।
এ দিকে চীনের পরিস্থিতিও সংকটজনক। এই মুহূর্তে চীনে করোনা পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান প্রদেশও দীর্ঘ লকডাউনের পরে খুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ব্যবসা বাণিজ্যও শুরু করেছে চীন। বস্তুত, চীন যেভাবে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের সরঞ্জাম বিক্রি করছে, তা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, চীনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীনের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্বে বিশেষজ্ঞদের অনুমান ছিল, পরিস্থিতি এমন থাকলে চীনের জিডিপি বা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এক থেকে দুই শতাংশ কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে প্রথম তিন মাসে তা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭০ সালের পরে এমন ঘটনা চীনের ইতিহাসে ঘটেনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগামী তিন মাসেও চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির বিশেষ সম্ভাবনা নেই। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্রলাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুধু চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা পৃথিবীই চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। তারই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ঘোষণা করেছে, ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা হলেও আগামী এক বছর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর রাখা হবে। কানাডাও জানিয়ে দিয়েছে আগামী বেশ কিছু দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সীমান্ত খোলা হবে না। তবে পণ্য চলাচল আগের মতোই হবে। ইউরোপের পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে সব দেশই ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলার পক্ষপাতী। যুক্তরাজ্যও জানিয়েছে, আগামী এক বছর বহু ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।