উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে ৬ বিক্ষোভকারী নিহত, দিল্লিতেও চলছে বিক্ষোভ

8
উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের হামলার দৃশ্য।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা ক্রমেই সীমানা ছাড়াচ্ছে ভারতে। গত বৃহস্পতিবার কর্ণাটকে দুজন ও লক্ষ্মৌতে একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
আর শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। আর এরই মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা কানপুরে ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে জন ৮ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর। সবশেষ খবর অনুযায়ী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের খবর মিলেছে। মেরুট, বাহরেচ, বুলন্দশহর, মুজাফফরনগরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। পাথর ছোড়া ও গাড়ি পোড়ানো হয় বুলন্দশহরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। কোথাও লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
এদিকে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লির জামা মসজিদে। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন ভিম সেনার প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারও যোগ দেন।
অন্যদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গতকাল ফের বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে রাজ্যের একাধিক জায়গায়। ফিরোজাবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় পুলিশের গুলিতে একজন প্রাণ হারান বলে জানা গেছে।
এদিকে নাগরিকত্ব আইন বাইরে থেকে নতুন করে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকার পথকে মোটেই প্রশস্ত করছে না। বরং যারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বহু বছর ধরে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের আবেদন করার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল।
আসামসহ উত্তর-পূর্বের আশঙ্কা নতুন আইন বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকার সুযোগ করে দেবে। সেই আশঙ্কাকে উড়িয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে বাংলাদেশ থেকে একজনও আসামে ঢোকার সুযোগ পাবে না। গুয়াহাটিতে তিনি বলেছেন, কেবল যারা বহু দশক ধরে আসামে বাস করছেন বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে এখানে এসেছেন, কেবল তারাই ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সর্বানন্দ সোনোওয়াল আরো জানিয়েছেন, একবার নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়ার পদ্ধতি শেষ হলে আবেদনকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেছেন, এটা নিশ্চিত যে নাগরিকত্বের অনুমোদন আসামের সামাজিক গঠনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আসাম চুক্তির ৬নং ধারা অসমিয়াদের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, পরিচয়গত, ঐতিহ্যগত সংরক্ষণ করতে সাংবিধানিক, আইনি ও প্রশাসনিক অধিকার দেয়।
অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সেই পরিস্থিতিতেই বুলন্দ শহরে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে আন্দোলনকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশের সঙ্গেই সংঘর্ষ বাঁধে আন্দোলনকারীদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভ রোখার চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে তপ্ত হয়ে উঠে গোরক্ষপুরও।
যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটবৃষ্টি দেখা গিয়েছে। তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইটবৃষ্টি ছোড়ে পুলিশও। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়েছে। ১৪৪ ধারা চালু থাকায় সকালের দিকে তেমন ঝামেলা না বাধলেও, বেলা বাড়তেই বিক্ষোভে তেতে উঠে মেরঠ। থামাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয়। বাহরাইচে পরিস্থিতি আরো চরমে উঠে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা নিলামে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে গতকাল রাতের গণ্ডগোলের জেরে, দিল্লির জামা মসজিদের বাইরে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়, জামা মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন বেআইনি। তবে কোনো পদক্ষেপ নিতে নারাজ দিল্লি পুলিশ। সকাল থেকেই জামা মসজিদের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়েই তবে জামা মসজিদে প্রবেশ করানো হচ্ছিল। সে সময় বিক্ষোভকারীরাও প্রবেশ করে বলে দাবি পুলিশের।
ধর্মীয় স্থানে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটেনি দিল্লি পুলিশ। এর ফাঁকে সংবিধানের রেপ্লিকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন চন্দ্রশেখর আজাদ। পুলিশের তরফে তাকে অনুরোধ করা হয়, যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় স্থানে বিক্ষোভ বেআইনি। কয়েক দিন ধরে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় উত্তাল রাজধানী।
গত বুধবার জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারিও এই আইনের বিরোধিতায় সরব হন। তিনি বলেছেন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভারতীয় মুসলিমদের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। গণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অধিকার সংবিধান মুসলিমদের দিয়েছে।
এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে শুক্রবার তৃণমূল ভবনে দলের বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রী বলেছেন, তিনি নিরপেক্ষ সংস্থার দ্বারা গণভোট করানোর কথা বলে ছিলেন। উদাহরণ হিসাবে রাষ্ট্রসংঘের কথা উল্লেখ করেছেন। চান নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে গণভোট হোক। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে বলবেন, গায়ের জোর না দেখিয়ে, জোড়াজোরি বা জেদাজেদি না করে মানুষেক আন্দোলন মেনে নিন। প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, দয়া করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।