পুঁজিবাজারের সংকট দূর করুন

11

বিশ্বের যেকোনো দেশে অর্থনীতি ভালো হলে সে দেশের পুঁজিবাজারও ভালো হয়। বাংলাদেশের চিত্র একেবারেই উল্টো। এখানে অর্থনীতি এগোলেও পুঁজিবাজার পেছনে হাঁটছে। কেন এমন হবে? বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে অবকাঠামো বা মূলে সমস্যা রয়েছে। আর সে কারণেই দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে হতাশা কাটছে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজারে এসে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছেন। ফাঁক বুঝে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আস্থার সংকট প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
১৯৯৬ সালের পর ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন। পথে বসেন অনেকেই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে আইসিবিকে দফায় দফায় টাকা দিয়েছে সরকার। চলতি বছর আইসিবির অনুকূলে দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা স্কিমের টাকা থেকে ৮৫৬ কোটি টাকা ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এসব টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে আইসিবির স্বচ্ছতা নিয়েও। মন্দাবস্থার মধ্যে পড়ে যাওয়া পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়। পুঁজিবাজার উন্নয়নে ‘মার্কেট মেকারের’ ভূমিকায় ১৯৭৬ সাল থেকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) একচ্ছত্রভাবে কাজ করছে। এবার আইসিবির পাশাপাশি একই ভূমিকায় কাজ করবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। প্রাথমিকভাবে এটিকে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, এটি কাটাতে আইসিবি কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে নয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর আনুপাতিক হারে সরকারের পক্ষ থেকে তারল্যের জোগান দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইসিবি কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিলে কারসাজি বাড়বে। বিনিয়োগকারীর কোনো উপকার হবে না। বিনিয়োগকারীর সক্ষমতা বাড়লে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় খুবই জরুরি। তাঁদের মতে, পুঁজিবাজারের পথ হারানোর অন্যতম কারণ দেশের পুঁজিবাজার একটি মাত্র পণ্য ইক্যুইটি-নির্ভর। আর ইক্যুইটি-নির্ভর এই পুঁজিবাজারে বিকাশের পথ রুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ইক্যুইটি বা শেয়ারনির্ভর পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হলে মূলে পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে চার শতাধিক বহুজাতিক কম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩টি কম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বছরের পর বছর এসব কম্পানি হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। সরকারকে এসব দিকও বিবেচনায় নিতে হবে। পণ্য বাড়িয়ে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠা গেলে গতি ফিরবে পুঁজিবাজারে।