মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন

19

কদিন আগেও মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ভয়াবহ আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছিল সারা দেশে। সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও, চলতি বছর জুন থেকেই সারা দেশে এর ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৮৬ হাজার ১৫৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আবার এটাও জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সারা বছরই ডেঙ্গু হয় এবং হবে। কাজেই এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করা না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ যে সম্ভব নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার ঢাকা শহরের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মশাই হলো কিউলেক্স। স্বাভাবিকভাবেই কিউলেক্সবাহিত রোগও আমাদের দেশে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ভাবলেই চলবে না, কিউলেক্স নিয়েও সমানভাবে ভাবতে হবে। কারণ কিউলেক্স থেকেও জাপানিজ এনসেফালাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশে আছে কয়েক বছর ধরেই। অর্থাৎ মশা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এত দিন ধারণা করা হতো, শহরে এডিস ইজিপটাই প্রজাতির মশা ডেঙ্গু ছড়ায়। অতিসম্প্রতি জানা গেছে, এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, গোদ, জাপানিজ এনকেফালাইটিসসহ আরো অনেক রোগের বাহক মশা। শীতের আগমনী বার্তায় সারা দেশেই মশার উপদ্রব আবার বেড়ে গেছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমলেও এটা এখন একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে তেমনটা ভাবা যাবে না। কম মাত্রায় সারা বছরই চলতে থাকবে। শীতের দিনে তুলনামূলক খুবই কম দেখা যাবে ডেঙ্গু।
দেশে প্রতিবছর এসব রোগে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। অথচ মশা নিয়ন্ত্রণ কিংবা ধ্বংসে দেশে কেন্দ্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্মসূচি নেই। মশা নিয়ন্ত্রণে মশক নিবারণী দপ্তর নামে সরকারের একটি সংস্থা আছে। এই দপ্তরের এখন আর কোনো কাজ নেই বললেই চলে। অনেক আগে ম্যালেরিয়া ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ তথা মশক নিধন করা ছিল তাদের অন্যতম কাজ। অনেকে মনে করেন, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশসহ বহু দেশে ম্যালেরিয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ম্যালেরিয়া কমে আসার কারণে মশা নিয়ন্ত্রণেও ভাটা পড়ে।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আমাদের দরকার একটি কেন্দ্রীয় মশকনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান, যার কাজ হবে মশা নিয়ে গবেষণা করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। পৃথিবীর একাধিক দেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।