সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-এর নাগরিক বন্ধনে বক্তারা ॥ স্কলার্সহোম স্কুলের ছাত্র ফাবিয়ানের উন্নত চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে

25
স্কলার্সহোম মেজরটিলা ক্যাম্পাসের ছাত্র ফাবিয়ান চৌধুরী চিকিৎসার ব্যয়ভার স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের মানববন্ধন।

নগরীর অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম স্কুল এন্ড কলেজ-এর চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাবিয়ান চৌধুরীর উন্নত চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার ‘স্কুল’ কর্তৃপক্ষকে বহন ও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে গতকাল ২২ জুন শনিবার বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক বন্ধন’।
সিলেট নগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম’র শিবগঞ্জ ক্যাম্পাস থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাবিয়ান চৌধুরী (১০)-কে গত ১৭ জুন মুমূর্ষু অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ফাবিয়ানকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। পাঁচ দিন হয়ে গেছে ফাবিয়ানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এই ঘটনা সম্পর্কে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা শুনেছেন ফাবিয়ান স্কুলের ৫ম তলার ছাদ থেকে পড়ে অচেতন হয়েছে। ফাবিয়ানের এই দুর্ঘটনা সিলেটের অভিভাবক মহলে উৎকন্ঠা সৃস্টি করেছে । স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা নাগরিকরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এ অবস্থায় গতকাল শনিবার ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক বন্ধন’ কর্মসূচি পালন করে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম নাগরিকবন্ধন কর্মসূচির সূচনা বক্তব্যে, ফাবিয়ানের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেন, ফাবিয়ান তোমার জন্য আমাদের হ্নদয়ে ও বিবেকে রক্ত ঝরছে”। আমরা তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমরা তোমার পাশে আছি।
সুচনা বক্তব্যে আব্দুল করিম কিম আরো বলেন, দুর্ঘটনা যে কোন সময়, যে কোন জায়গায় ঘটতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন নিজের ঘরেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার কারণতো জানতে হবে। কারন উদ্ঘাটন হলে স্পষ্ট হবে ফাবিয়ান কেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে ? সে কি নিছক একটি দুর্ঘটনার স্বীকার ? ফাবিয়ানের সংকটাপন্ন জীবনের জন্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটুকু দায়ি তা খুঁজে বের করতে হবে। ঘটনার সাথে সাথেই অভিভাবক প্রতিনিধি ও নাগরিক প্রতিনিধি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত ছিল। এখন রাষ্ট্রের উচিৎ অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা। একিই সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ফাবিয়ানের উন্নত চিকিৎসা সেবার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
নাগরিকবন্ধন কর্মসূচিতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী গোলাম সোবহান চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ঘটনার বিবরন তুলে ধরে পরিবারের পক্ষ থেকে বলেন ফাবিয়ানের দাদা সম্পর্কীয় সৈয়দ ফয়সল আহমেদ। তিনি বলেন, ফাবিয়ান পাঁচ তালা থেকে পড়ে গেছে এমন খবর পেয়ে আমরা পাগলের মত স্কুলে ছুটে যাই। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন বলেন, ফাবিয়ানকে ছাঁদ থেকে ভূতে ফেলা দেয়ার কথা বলেছেন দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ। এছাড়া স্কলার্স হোম স্কুল ও কলেজ-এর বিভিন্ন শাখার অভিভাবকদের মধ্য থেকে রাখা বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন মফিজুর রহমান বারেক, মীর সাইদুল আহরার, ব্যাংক কর্মকর্তা জায়েদুল বাহার রাসেল ও কাশেম আজাদ, মুজাহিদ খান গুলশান, নুরুল ইসলাম সাজুয়ান প্রমুখ।
ফাবিয়ানের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’ কর্মসুচিতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, সিলেট ক্যাবল সিস্টেম লিমিটেড-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমদ বাবলা, চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব সামছুল বাসিত শেরো, বাসদ ( মার্কসবাদী ) সদস্য হুমায়ুন খাঁন শোয়েব, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, শিশু সংগঠক বিমান তালুকদার, গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাত আরা খান পান্না, কৃষিবিদ মোজাদ্দিদ আহমদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রুবাইয়াৎ আহমদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাশ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি