মুখ খুলছেন বিএনপি নেতারা ॥ ভোটে ভরাডুবির জন্য হাইকমান্ড দায়ী

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দলীয় হাইকমান্ডের কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলে দলের নেতারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই ক’জন নেতা প্রকাশ্যে এ তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। আরও কিছু নেতা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর তা সামাল দিতে না পারলে বিএনপি নতুন করে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়বে।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লন্ডনে বসে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর তাকে সার্বিক সহায়তা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ আরও কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা। তারেক রহমানের সঙ্গে মিলে এসব নেতা দলীয় মনোনয়নসহ নির্বাচন পরিচালনার সকল কর্মকৌশল নির্ধারণ করেন। বিএনপির ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও সারাদেশের জেলা-উপজেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা দলের নির্বাচনী কৌশলের বিষয়ে ছিলেন অন্ধকারে। তবে নির্বাচন চলাকালে কিছু না বললেও দলের ভরাডুবির পর এখন এক এক করে হাইকমান্ডের প্রতি ক্ষুব্ধ নেতারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পোস্টমর্টেম : জাতীয় নির্বাচন-২০১৮’ এক উপ-সম্পাদকীয়তে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার পাশাপাশি দলীয় ব্যার্থতার কথাও ফলাও করে তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে ব্যর্থতার বেশ ক’টি কারণ তিনি সুস্পষ্টভাবেই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে দলের আপন আর কে পর তা বিএনপি চিহ্নিত করতে পারেনি। আর এ জন্য নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামালেরও সমালোচনা করেন।
এর আগে দলীয় এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করে অবিলম্বে দল পুনর্গঠনের দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ। এরপর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ জামায়াতকে জোটে রাখায় নির্বাচনে বিএনপির নেতিবাচক ফল হয়েছে উল্লেখ করে স্বাধীনতাবিরোধী এ দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া একটি দৈনিক পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য কে দায়ী তা সরাসরি না বললেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, রাজনীতি করতে হলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসতে হবে। তিনি একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানান।
আর বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এখন তারেক রহমানকে অন্তত ২ বছরের জন্য বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তারেকের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিএনপির উচিত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়া। এ সময় তিনি জাতীয় নির্বাচনেও কিছু ভুল কৌশল ছিল বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে বিএনপির নিজস্ব কৌশলের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ও এ জোটের আহ্বায়ক ড. কামালের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা এখন প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।