কমলগঞ্জে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ৬,৭৯৫ পরিবার স্বাবলম্বী

34

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৭৯৫টি পরিবার দরিদ্রতাকে জয় করে এখন স্বাবলম্বী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এ প্রকল্পের আওতায় তারা গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, নার্সারি, পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে আয় বৃদ্ধি করছেন। এসব পরিবারে অভাব দূর হয়ে স্বচ্ছলতার আলো জ্বলেছে। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন দেখছেন এসব পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রকল্পের আওতায় এসব পরিবার এখন নিজেরা সঞ্চয় করছেন। সেই সঞ্চয়ের পাশাপাশি সরকারী বরাদ্দ যোগ হয়ে তাঁদের সঞ্চয়ের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখান থেকে ঋণ গ্রহণ করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। তাঁরা গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী ও ভেড়া প্রতিপালন, শাকসব্জি চাষ, ছোট ছোট ব্যবসা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে এসব পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছে। দারিদ্র বিমোচনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় কমলগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে ১৫৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়। প্রত্যেক সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬০ জন। এর মধ্যে নারী ৪০ জন ও পুরুষ ২০ জন। প্রত্যেক সদস্য মাসে ২শ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। সরকার উৎসাহ বোনাস হিসেবে প্রত্যেক সদস্যকে সঞ্চয়ের সমপরিমান প্রদান করা হয়।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কমলগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী আজিজুন্নেছা খাতুন বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমাদের কমলগঞ্জে ২০০৯ সাল থেকে চলমান আছে। এ পর্যন্ত ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে ১৫৯টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এতে ৬ হাজার ৭০২জন সদস্য রয়েছে। সদস্যরা সঞ্চয় জমা করেছে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা এবং সঞ্চয় বিপরীতে সরকার উৎসাহ বোনাস দিয়েছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। প্রত্যেক সমিতিতে সরকার ঋণ তহবিল হিসেবে দিচ্ছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে। এ পর্যন্ত ১৫৯টি সমিতি ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা পেয়েছে।
এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে উপকারভোগী সদস্যদের বিভিন্ন ট্রেডে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যেমন গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, নার্সারি, শবজি চাষ। এসব ট্রেডে ৪ হাজার ২৭৫ জন সদস্যকে ৬ কোটি ২৫ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এখনো কমলগঞ্জ পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে নতুন সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের সুফল ভোগী মাধবপুর গ্রামের নির্মল সিংহ পলাশ বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ঋণ দিয়েছে। ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছি, অনেকে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী ক্রয় করেছে, শাক-শবজি চাষ করছি। এভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঋণ নিয়েছি। তিনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সহ সরকারের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দুরদর্শী চিন্তা চেতনার ফসল। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের অতি দরিদ্র পরিবাগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, দারিদ্রতা হ্রাস পাচ্ছে। দেশ টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সঠিকভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশ থেকে দারিদ্রতা চিরদিনের জন্য নির্মুল হবে।
গত সোমবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীএকটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প সমিতির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।