স্ত্রীকে পাচারের দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

55

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে স্ত্রীকে ভারতে পাচারের দায়েরকৃত মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অপরজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। গতকাল বুধবার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (জেলা জজ) আদালতের বিচারক মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- মো: বুলবুল মিয়া ভুলু (২৫)। সে কুড়িগ্রাম সদর থানার পরঅনাজি পলাশবাড়ীর ফাবেদ আলীর পুত্র। বর্তমানে সে বাগবাড়ী নরসিংটিলার মাখন মিয়ার বাড়ীর বাসিন্দা। এবং খালাসপ্রাপ্ত সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার নয়াবন্দর তিলক (পূর্বতিলক) গ্রামের মৃত গউছ মিয়ার পুত্র বর্তমানে বাগবাড়ী এতিম স্কুল রোডের ১৫/১ নং বাসার বাসিন্দা মো: নাছির মিয়া (২৬)। রায় ঘোষনার সময় আসামীরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৮ জুন আসামী মো: বুলবুল মিয়া ভুলুর সাথে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার রমিজ উদ্দিনের কন্যা বর্তমানে শহরতলীর খাদিমনগর বিসিক শিল্পনগরীর বাসিন্দা মোসলিমা আক্তার (২১)’র বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস পর স্বামী বুলবুল মিয়া ভুলু স্ত্রী মোসলিমা আক্তারকে ভারতে পাচার করেন। এদিকে মোসলিমা আক্তারের ভাই মো: শাহজাহান মিয়া ছোট বোনের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তিনি আসামীর বর্তমান বাগবাড়ী নরসিংটিলা বাসায় যান। সেখানে বোন ও বোনের স্বামীকে না পেয়ে ভুলু’র বোন রহিমা তার স্বামী জয়নাল আবেদীন ও ভুলুর বন্ধু নাছির মিয়াকে বাসায় পান। এ সময় বোন মোসলিমা ও বোনের স্বামী ভুলুর বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায়, তারা ঢাকায় গেছে। দীর্ঘ ৪/৫ মাস পর আবার বোনের খোঁজে শাহজাহান মিয়া তাদের ওই বাগবাড়ীর বাসায় গেলে তারা কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। পরে মোসলিমা আক্তারের পরিবার স্বামী ভুলুর কুড়িগ্রামস্থ স্থায়ী ঠিকানায় গিয়েও বোন ও তার স্বামীকে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে শাহজাহান মিয়া বাদি হয়ে ৩ জনকে আসামী করে কোতোয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৭০(৬)২০০৮ ও জিআর নং-৫৯৫/২০০৮।
পরে ২০১২ সালে রাজশাহী অঞ্চল ভিত্তিক এনজিও সংস্থা (অঈউ) মোসলিমা আক্তারকে ভারত থেকে উদ্ধার করে জেলার সেলটার হোমে স্থানান্তর করে। পরে রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার (১২৩৩-২৮/০৩/২০১২) নং জিডি মুলে মোসলিমা আক্তারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে এসএমপি’র গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক পিপিএম রওশন আরা বেগম ২০০৮ সালের ৯ অক্টোবর আসামী মো: বুলবুল মিয়া ভুলু ও মো: নাছির মিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০০৯ সালের ১১ মে মামলার চার্জগঠন করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী মো: বুলবুল মিয়া ভুলুকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৫(১) ধারায় দোষী সাবাস্ত করে তাকে উল্লেখিত কারাদন্ড এবং অপর আসামী মো: নাছির মিয়ার দোষ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি এডভোকেট মো: আবদুল মালেক ও আসামীদের পক্ষে এডভোকেট মো: বেলাল উদ্দিন ও এডভোকেট আবু তাহের মামলাটি পরিচালনা করেন।