ক্যান্সার শনাক্তকরণ

48

নানা ধরনের ক্যান্সারে আমাদের দেশে প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। মৃত্যুহার বিবেচনায় তা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ রোগ যথাসময়ে শনাক্ত না হওয়া। সাধারণত বেশির ভাগ ক্যান্সার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে চিকিৎসা না হলে পরের ধাপে তা আর নিরাময়যোগ্য থাকে না। যথাসময়ে ক্যান্সার শনাক্ত না হওয়ার মূল কারণ দারিদ্র্য ও অসচেতনতা। রোগ নির্ণয়ের ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার কারণে অনেকেই অসুস্থতার প্রথম দিকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে না। যখন যায় তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। এর ফল হয় অত্যন্ত করুণ। সেই করুণ পরিণতি রোধ করতে এগিয়ে এসেছেন এক দল গবেষক। তাঁরা এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যাতে মাত্র পাঁচ মিনিটে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বলে দেওয়া যাবে, রোগীর ক্যান্সার আছে কি নেই। এতে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। গৌরবের কথা, যে গবেষকরা এই আবিষ্কার সম্পন্ন করেছেন, তাঁরা সবাই বাংলাদেশি এবং গবেষণাটিও সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।
বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে, তারই প্রমাণ উন্নততর এসব গবেষণা। এর আগে বাংলাদেশের গবেষকরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছেন। ধানের নতুন নতুন উন্নততর জাত আবিষ্কারের গবেষণা সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। অন্যান্য ফল, ফসল ও মাছের গবেষণায়ও বাংলাদেশের অনেক সুনাম রয়েছে। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চতর গবেষণায় সরকারের বর্ধিত সহযোগিতার কারণে। সেই ধারায় এবার সাফল্যের খাতায় যুক্ত হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। গত বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের শাবিপ্রবিতে উদ্ভাবিত ক্যান্সার শনাক্তকরণ প্রযুক্তির নানা দিক তুলে ধরা হয়। জানা যায়, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প হেকেপের আওতায় ২০১৬ সালে শাবিপ্রবিতে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিচালিত এই গবেষণা প্রকল্পে শাবিপ্রবির ২৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছেন। তাঁদের দিনরাত পরিশ্রমের ফসল এই আবিষ্কার, যা জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করছে।
শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেই কোনো দেশ উন্নত হয় না শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই সামগ্রিকভাবে দেশটিকে এগিয়ে যেতে হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক ও সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা দেশকে সেভাবেই এগিয়ে নিচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় গবেষণা প্রায় ছিলই না। সেখানে ক্রমাগতভাবে বরাদ্দ বাড়িয়ে, অবকাঠামো তৈরি করে এবং সঠিক নীতিকৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রকে অনেক গতিশীল করা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং উত্তরোত্তর তা আরো বেগবান করতে হবে। শাবিপ্রবির যে গবেষণা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে, সেই গবেষকদলের সব সদস্যের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন।