গাজীপুরে দেড় লাখ ভোটে এগিয়ে নৌকা

42

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রের ফলাফল জানা গেছে। এতে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক নিয়ে এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর আলম।
অনানুষ্ঠানিকভাবে ২৩২টি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ৪২৫টি।
এসব কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে পড়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৩৯ ভোট। আর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দীন সরকার পেয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৫ ভোট।
এই নির্বাচনে যে ৪২৫টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে তার মধ্যে নয়টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে জালভোট ও সিল মারার অভিযোগ পেয়ে। বাকি কেন্দ্রগুলোতে ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।
শুরু থেকেই আসা ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ধানের শীষের তুলনায় দ্বিগুণ ভোট পড়ছে নৌকায়। এখন অবধি পাওয়া প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই বেশি ভোট পড়েছে ক্ষমতাসীন দলে।
সনাতন পদ্ধতির মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেয়া কেন্দ্রগুলোর চিত্রও একই রকম। সেখানেও বিএনপির চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এই ছয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ পেয়েছে চার হাজার ৮১০ ভোট, আর বিএনপি পেয়েছে দুই হাজার ২৯৭টি।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা গাজীপুর সদরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করছেন। সেখানে ফল ঘোষণায় অবশ্য কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রে গণনা শেষে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সই করা কাগজ আসলে পরে সেখানে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু কেন্দ্রে গণনা শেষে প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছেও ফলাফল তুলে দিচ্ছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। আর এই এজেন্টরা তা জানিয়ে দিচ্ছেন প্রার্থীদের কাছে।
আর প্রার্থীরাও ফলাফল সংগ্রহ করে তা যোগ করে জানিয়ে দিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীদেরকে।
তবে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলমের মিডিয়া সেল এভাবে ফলাফল সংগ্রহ করে জানালেও বিএনপির হাসান সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট নিয়ে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগও বেড়েছে। সকালে একই সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে ৫০টি কেন্দ্র এবং পরে শতাধিক কেন্দ্র দখলের পর বিকালে দুই শতাধিক কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনেছেন তিনি।
বিকাল তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে গাজীপুরের নির্বাচনে দুইশর উপরে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
‘বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে, হাসিনা মার্কা নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না।’
এর আগে বেলা ১১টায় প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন রিজভী। এ সময় তিনি ৫০টি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন তিনি। পরমুহূর্তেই সংখ্যাটি হয়ে যায় শতাধিক।
বিকালের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তার পরও যারা যাবে তাদের মারধর করা হবে, এর পর তাদের গ্রেফতার করা হবে। এক অনাচারের বিভিষিকা তার অধীনের নির্বাচন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনের নির্বাচন সবগুলির সব নতুন মডেলের নির্বাচন হয়। শেখ হাসিনা ভোটারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন, জনগণের আকাঙ্খা পদদলিত করে জাল ভোট, ভোট ডাকাতি করে নিজের প্রার্থীকে জেতায়। এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচন, যেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না। তিনি জনগণকে তাজ্য করার নির্বাচন উপহার দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বিবেকহীন নির্বাচন কমিশন এত কথা বললেন। খুলনার মতো পরিস্থিতি হবে না। কিন্তু গাজীপুরে সেটা ব্যাপক ভাবে হলো, এখন পর্যন্ত দুইশর উপরে কেন্দ্র দখল করে নিজেদের মতো সিল মারলো।
রিজভী বলেন, এই নির্বাচন কমিশনকে জনগণের কাছে জবাব দিহি করতে হবে। কেউ এই নির্বাচন কমিশনকে বাচাতে পারবে না।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পুর্ন রূপে ভোটারদের সাথে প্রতারনা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রাথী বের করে কেন্দ্র দখল সব হয়েছে এই নির্বাচনে।
যেসব কেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ
রিজভী দুই শতাধিক কেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ করলেও নাম উল্লেখ করলেন অল্প কিছু কেন্দ্রের।
বিএনপি নেতা বলেন, ১৪ নং ওয়াডের বাসন সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সকল এজেন্ট বের করে দেয়া হয়ছে। মকবুল মাদ্রাসার ছয়টি বুথ দখল করা হয়ছে।
‘জোড়ার পারে নয়টি বুথ, বসুরা মক্তব মাদ্রাসায় সাতটি বুথ দখল করা হয়েছে।’
‘তাকবিয়াতুল ইসলাম মাদ্রাসায় সব কটি, শরিফপুরে চারটি কেন্দ্র, অনন্ত মডেল কিন্ডার গার্টেনে সবগুলো, আব্দুর রহমান মেমোরিয়াল স্কুলের আটটি, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবগুলি কেন্দ্র দখল করা হয়েছে।’
‘২৬ নং ওয়ার্ডের কমিশনার প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর ওপর সরকারি বাহীনি হামলা করেছে।’
‘৩৬ নং ওয়র্ডে পাঁচটি কেন্দ্রে ১৪০ এজেন্টকে বের করে দিয়ে সিল মারা হয়েছে।’
‘৪১ নং ওয়ার্ডে পাঁচটি বুথ এবং ৪২ নং ভোটারদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।’
‘৪৪ নং ওয়ার্ডে নয়টি বুথ, ৪৮ নং ওয়াডে পাঁচটি বুথ ৪৯ নং ওয়াডের জাগরনী স্কুলে ছয়টি বুথ দখল করা হয়েছে।’