বন ধ্বংস রোধ জরুরী

147

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমির সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এর পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে এখন বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে এবং দ্রুত তা কমছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ বা জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনাকারী দেশগুলো তাই বনভূমি রক্ষার কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশে এখনো তেমন কোনো প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না। ফলে এখনো নির্বিচারে বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। জানা গেছে পঞ্চগড় জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে বহু অবৈধ করাতকল এবং এসব করাতকলের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে বন। এই চিত্র শুধু পঞ্চগড়েরই নয়, বরং সারা বাংলাদেশের। বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপনের বিধান নেই। অথচ বেশির ভাগ করাতকলই স্থাপিত হয় বনভূমির দু-তিন কিলোমিটারের মধ্যে। এটি রোধ করার দায়িত্ব বন বিভাগের হলেও তারা যেন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। অভিযোগ আছে, বন বিভাগের লোকজনকে ‘ম্যানেজ’ করেই পরিচালিত হচ্ছে এসব করাতকল।
জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২৩৮টি করাতকল রয়েছে, যার মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ৫৯টি করাতকলের। এগুলোও দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স নবায়ন করে না। ফলে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাইসেন্স ছাড়াই যদি ব্যবসা করা যায়, তাহলে অযথা খরচ করতে যাবে কে! কিন্তু লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কী করছে? রাজস্ব বিভাগ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর কী দায়িত্ব পালন করছে? জানা যায়, সেখানে দেদার চাঁদাবাজি চলছে। লাইসেন্স থাক বা না থাক, করাতকল মালিকদের মাসিক চাঁদার ভিত্তিতেই ব্যবসা চালাতে হয়। ফলে তাঁরাও আর লাইসেন্সের তোয়াক্কা করেন না। এতে দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার বনাঞ্চল। এর আগে ভাওয়াল, মধুপুর, শ্রীমঙ্গলসহ অন্যান্য বনভূমির পাশে থাকা শত শত অবৈধ করাতকল নিয়েও একই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবনতিই চোখে পড়ে।
আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ক্রমেই উন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টা করছি। ২০৪০ সালে যদি আমরা উন্নত দেশ হই, তখন কী আমরা দেশে কোনো বনভূমি দেখতে পাব? বনভূমিহীন সেই দেশে মানুষ কি সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবে? মানুষ কি শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে? পৃথিবীর অনেক দেশে, অনেক শহরে আজ এই সংকট প্রবল। সেই সংকটে পড়ার আগেই আমাদের বন ধ্বংস রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।