দিরাইয়ে আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ১৪ তম বর্ষপূর্তি আজ ॥ ১৩ বছর পরও বিচার পায়নি আব্দুল ওয়াহিদের পরিবার

29

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
আজ ২১ জুন। ঐদিন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরে আওয়ামীলীগের এক জনসভায় গ্রেনেড ও বোমা বিস্ফোরন ঘটানো হয়। ঐ ঘটনায় নিহত হন আব্দুল ওয়াহিদ নামের এক যুবক। আহত হন আওয়ামীলীগের ৫০ নেতাকর্মী। আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনামগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা দিরাই শাল্লা থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বিশাল জনসভায় বক্তৃতা দান শেষে সভামঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথে উক্ত গ্রেনেড ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দিরাই থানার এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদেরকে আসামী করে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলায় মুফতি হান্নানসহ রাষ্ট্রীয় জঙ্গিদেরকে আসামী সম্পৃক্ত করে মামলাটির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি অভিযোগপত্র দাখিল করে। পুলিশের অভিযোগপত্রে মুফতি হান্নানসহ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গৌছ আলীসহ রাষ্ট্রীয় জঙ্গি ও বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়। কিন্তু সিআইডি পুলিশের তদন্তে স্থানীয় কোন সন্ত্রাসীদেরকে আসামী বা শনাক্ত করা হয়নি। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ স্থানীয় সম্পৃক্ততা ছাড়া এত বড় ঘটনা সংগঠিত হতে পারে না। এ ঘটনার ১৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও মামলাটি যেমন আলোর মুখ দেখেনি তেমনি ঐ ঘটনায় আহত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা এখনও দেহে গ্রেনেডের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে নিহত আব্দুল ওয়াহিদের পরিবারটির খোজখবর নেওয়ার যেন কেউ নেই। জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী বেগ ও ইউপি সদস্য মহীম উদ্দিন বলেন,মাতারগাঁও গ্রামের ঠাকুরধন উল্লাহর পুত্র নিহত আব্দুল ওয়াহিদ। জীবদ্দশায় সে একজন ইঞ্জিনচালিত নৌকার চালক ছিল। নৌকার মাঝি হিসেবে সে জীবিকা নির্বাহ করতো। গ্রেনেড হামলায় নিহত হওয়ার পর তার অবলা বিধবা স্ত্রী ২টি সন্তান নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিহত পরিবার হিসেবে তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। আমরা খেয়াল করে তাদেরকে মাসিক ৫শত টাকা ও ৩০ কেজি ভিজিএফ এর চাল ত্রাণ সহায়তা বাবত প্রদানের চেষ্টা করি। দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া বলেন,গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জননেতা সুজাত আহমদ চৌধুরী, দিরাই থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়া, রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজউদৌলাসহ প্রায় ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন। আহত ও পঙ্গু অবস্থায় পরবর্তীতে আহতদের অনেকে মারা গেছেন। কিন্তুু অতীব দু:খের বিষয় তারা অনেকেই এ জঘন্য হামলার বিচার দেখে যেতে পারেননি। নিহত আব্দুল ওয়াহিদের পরিবারকে স্থানীয় এমপি হিসেবে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করলেও রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারটিকে কোন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়নি বলে জানান মেয়র। দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সর্দার, সহ-সভাপতি এডিশনাল পিপি এডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট সামসুল ইসলাম বলেন, দিরাইয়ের চাঞ্চল্যকর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় জঙ্গিদের পাশাপাশি স্থানীয় সম্পৃক্ততা অবশ্যই ছিল। আমরা চাই পুলিশ অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত স্থানীয় অস্থানীয় জঙ্গিদের সনাক্ত করে আইনের হাতে সোপর্দ করুক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, আজ ২১ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। পৌরমেয়র মোশাররফ মিয়া উক্ত স্মরণ সভায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।