খুন-খাবারি বাড়ছে

41

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। প্রতিদিনই ঘটছে বহু খুনখারাবির ঘটনা। সেই সঙ্গে ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, নারী নির্যাতনের ঘটনা তো আছেই। গত বৃহস্পতিবার একই দিনে প্রকাশ্যে দুজন জনপ্রতিনিধিকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জানা যায়, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা (৫২) সকাল সোয়া ১১টায় বাসা থেকে বেরিয়ে কাছেই উপজেলা পরিষদ অফিসে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁর সঙ্গী রুপম চাকমা। শুক্রবার দুপুরে শক্তিমান চাকমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে খাগড়াছড়ি থেকে কয়েকজন নানিয়ারচর যাওয়ার পথে বেতছড়ি এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে আরো পাঁচজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। অপর ঘটনায় নিহত হয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক (৭০)। জানা যায়, ছয়বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজুল হক দুপুর ১টার দিকে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কাছে থেকে পর পর কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলের চালকও গুরুতর আহত হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখানকার পাহাড়ি-বাঙালি সবাই একধরনের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অভিযোগ আছে, সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় এবং অনেকে প্রায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনায় সংগঠনের এক নেতা স্থানীয় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন। কিছুদিন আগে ইউপিডিএফেরও এক নেতা নিহত হয়েছেন এবং দুই নারী নেত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে খুনাখুনির ঘটনা। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে পাহাড়ে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান পরিচালনার দাবি করা হয়েছে। এমন দাবি অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। রায়পুরায় যে দুর্বৃত্তরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে, তারা এলাকায় নিশ্চয়ই আরো অঘটন ঘটাবে। নরসিংদী শহর এবং বিভিন্ন উপজেলায় এরই মধ্যে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের খুঁজে পায় না কেন?
কমবেশি সারা দেশেই চলছে এমন খুনখারাবির ঘটনা। দেখা যায়, চট্টগ্রামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বাড়ির দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। নাটোর, দিনাজপুর ও হবিগঞ্জে এক শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যা যেন এখন ডালভাত হয়ে গেছে। এর অবসান জরুরি। অবিলম্বে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি আরো জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতিটি ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।