সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনী পদক্ষেপ

33

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে সড়ক দুর্ঘটনা। দেশের সড়ক-মহাসড়কে আগে অনেক বিপজ্জনক বাঁক ছিল, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে; কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। থামছে না মৃত্যুর মিছিল। চলতি বছরের শুরুতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্রটি তুলে ধরে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাত হাজার ৩৯৭ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করে এক হাজার ৭২২ জন। আহত হয়েছে ১৬ হাজার ১৯৩ জন। ২০১৭ সালে দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহনের মধ্যে আছে এক হাজার ২৪৯টি বাস, এক হাজার ৬৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ২৭৬টি হিউম্যান হলার, ২৬২টি কার-জিপ-মাইক্রোবাস, এক হাজার ৪৭৫টি মোটরসাইকেল। গত জানুয়ারিতেই এক আলোচনাসভায় উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশ বা ৩৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ১২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার হিসাব করে সম্প্রতি ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল জানিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার প্রায় ২২ লাখ কোটি টাকা। এ হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত গতি, ওভারলোডিং, বিকল গাড়ি ইত্যাদি। চালকরা হরহামেশাই আইন ভঙ্গ করে। বিপজ্জনকভাবে লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেকিংও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানবাহনের গতি ৫ শতাংশ কমালে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের চালকদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। এখানে বেশির ভাগ গাড়িচালকের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই, নেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও। চালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করে অনেকেই আজ চালক। সড়ক নির্দেশিকা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকার পরও অনেককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। সঙ্গে আছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ব্যস্ত মহাসড়কে উঠে আসছে স্বল্প গতির যানবাহন। দেশের গাড়িচালকদের সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে চালকদের মানসিকতার পরিবর্তনও আনতে হবে।