অবৈধভাবে কয়েক লাখ বিদেশী নাগরিক অবস্থান করছেন এ দেশে ॥ জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে

31

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে কত বিদেশি নাগরিক আছেন, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। তাদের মধ্যে কতজন অবৈধ সেটাও জানা নেই কারও। পুলিশের বহির্গমন (ইমিগ্রেশন) শাখায় বৈধ-অবৈধ বিদেশি নাগরিকের হিসাব রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে ইমিগ্রেশন শাখা থেকে এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
মাঝে মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া বিদেশি নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়। ইন্টারনেটে প্রতারণা, জাল টাকা, অস্ত্র, স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বিদেশি এসব নাগরিকের বিরুদ্ধে। ফলে দেশীয় অপরাধীদের পাশাপাশি বিদেশি অপরাধীদের বিষয়েও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো তৎপর রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে বৈধভাবে প্রায় দুই লাখ বিদেশি অবস্থান করছেন। এছাড়াও অবৈধভাবে বসবাস করছেন আরও কয়েক লাখ। কিন্তু এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পুলিশ সদর দফতরের কাছে নেই। একটি তালিকা আছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বহির্গমন শাখায়। সেখানকার তালিকারও হালনাগাদ কোনও তথ্য নেই পুলিশ সদর দফতরের কাছে। তবে সংস্থাটির একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এক হাজারের বেশি অবৈধ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসা ও হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক বিদেশিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিককে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন গোয়েন্দারা। এছাড়া বেশিরভাগ বিদেশি কোথায় কী ধরনের কাজ করছেন তার বেশিরভাগ তথ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নেই। তাই বিদেশিদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়াতে একটি টাস্ক গ্রুপ গঠন করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বিদেশিদের যাতায়াতের পথ, বিনোদনের স্থান ও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারিরও নির্দেশনা রয়েছে। অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিও রয়েছে। সন্দেহজনক হলে আটক করা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করছে।
গোয়েন্দারা জানান, বিদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে অবস্থান করে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, তাইওয়ান, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, চীন, তানজানিয়া, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের বিরুদ্ধেই এসব অভিযোগ বেশি।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একটি নাইজেরিয়ান প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, এরা প্রথমে বৈধভাবেই বাংলাদেশে আসে। পরে প্রতারণা ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে বা লুকিয়ে ফেলে। ফলে আটক করার পর তাদের পরিচয় নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, দেশে অবস্থান করা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দেশে কতো বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছে জানতে চাইলে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) বহির্গমন শাখার (ইমিগ্রেশন) বিশেষ পুলিশ সুপার আলমগীর রহমান বলেন,‘এগুলো গোপনীয় বিষয়। তাছাড়া এ মুহুর্তে কতো অবৈধ বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছে সেটা আমার জানা নেই।’
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ১৬৬ জন অবৈধ বিদেশিকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে জাল টাকা, হেরোইন, বিদেশি মদ, নেশা জাতীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের মুখপাত্র ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, দেশে কতো অবৈধ বিদেশি অবস্থান করছে সেটা র‌্যাবের জানার বিষয় নয়। এজন্য আলাদা সংস্থা আছে। তবে দেশীয় অপরাধী ছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থান করা অবৈধ বিদেশিদের অবস্থান শনাক্ত করতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরই তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন।