ছাতকে দু’গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত শতাধিক, আটক ২৪

44

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
IMG_1293 copyছাতকে পাওনা টাকার লেনদেন নিয়ে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের পাইগাঁও ও খিদ্রাকাপন গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৯১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২৯ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার সন্দেহে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দু’পক্ষের আহত ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে জাউয়াবাজার ইউনিয়নের পাইগাঁও গ্রামের আসিদ আলীর পূত্র জমির আলীর কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খিদ্রাকাপন গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের পুত্র সেলিম আহমদের সাথে তার বাক-বিতন্ডা ও হাতা-হাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় নিষ্পত্তি হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছিল চাপা উত্তেজনা। হাতা-হাতির ঘটনাটি শনিবার উভয় পক্ষের লোকজন নিজ-নিজ গ্রামবাসীকে অবহিত করেন। রবিবার বিকেলে বিষয়টি জানতে জাউয়া-ছাতক সড়কের ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হন খিদ্রাকাপন গ্রামের গণ্যমান্য লোকজন। এ সময় জমির আলীর চাচা মর্তুজ আলী এখানে উপস্থিত হয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তাদের নিকট অনুরোধ জানান। ঘটনাটি নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা চলাকালে পাইগাঁও গ্রামের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলার চেষ্টা করলে খিদ্রাকাপন গ্রামবাসির সাথে তাদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে ঘন-ঘন ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক-জাউয়াবাজার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী সাধারণ। চারদিকে আতঙ্কে  ছড়িয়ে পড়লে জাউয়াবাজারের অধিকাংশ দোকান-পাঠ বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভয়াবহ এই সংঘর্ষে এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
সংঘর্ষ থামাতে প্রথম অবস্থায় জাউয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। খবর পেয়ে রাত ৮টায় সুনামগঞ্জ  থেকে দাঙ্গা পুলিশ ও ছাতক থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাটিচার্জের পাশাপাশি ৯১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২৯ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত আবদুল মুকিত (৩২), জামাল (২৫), আবারক আলী (৫০), সাগর উদ্দিন (৫০), এখলাছ আলী (২৫), শিবলু (২০), সিদ্দিকুর রহমান (৩০), লোকমান (৩০), আকমল (২৬), আবদুর রাজ্জাক (৫৫), আবদুল কাইয়ূম (৩৪) আলী নূর (২৮), হাবিবুর রহমান (৩৬), আমিনুর রহমান (২৮), ছিদ্দিকুর রহমান (৩০), রুবেল (১৮), মনফর আলী (৫৫), আবু তাহের (২২), মঈন উদ্দিন (৩৩), সাহাব উদ্দিন (২৮), মজুন মিয়া (৩০)সহ ২৫জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে মধ্যস্থতাকারি সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া, ইউপি সদস্য আবদুল কদ্দুছ সুমন, পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর মোর্শেদ, এসআই নূর মোহাম্মদ, এএসআই সাইফুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম, কনষ্টেবল আবদুল মোমেনসহ ৭জন পুলিশ সদস্য আহত হন। কৈতক হাসপাতাল সূত্রে জানিয়েছে, সংঘর্ষে আহত সোনা মিয়া (৬০), আকবর আলী (৫৫), জাহানুর (৪৫), আবদুল মুকিত (৩৬), আমিনুর রহমান (৪০), লোকমান আহমদ (৩৩), আকমল হোসেন (২৮), খালেদ আহমদ (২৯), হাসান আহমদ (২৩), মিছির মিয়া, শিপু মিয়া, সুনু মিয়া, শফিক মিয়া, রুমান আহমদ, আলী নুর, রায়হান আহমদ, আবদুল আলীম, শিপলু দাশ, দিজেন্দ্র দে, মধ্যস্থকারি চরমহল্লা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া, আবদুল কদ্দুছ মেম্বারসহ প্রায় ৭০জনকে চিকিৎসা ও ভর্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া  মাসুম আহমদ (২২), মাহমুদ আলী (১৯), আমিন আহমদ (২৩), মারুফ আহমদ (২৪), বিলাল হোসেন (৩৫), নুরুজ্জামান (২৪), অলিউর রহমান (১৮), ইসমাঈল হোসেন (২০), আফিজ আলী (৩৫), সমুজ আলী (২৫), আবদুল কাইয়ুম (১৯)সহ অন্যান্য আহতদের ছাতক উপজেলা সদর হাসপাতালসহ স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ছাতক-দোয়ারা অঞ্চলের (সার্কেল) সহকারি পুলিশ সুপার দুলন মিয়া ও উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, ইউপি চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে দু’গ্রামবাসির মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আটক ২৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুনামগঞ্জ কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।