সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
নগরীতে স্কুল ছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় পুলিশ সদস্য, পুলিশের কথিত সোর্স ও ২ ওলামালীগ নেতার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৮/৩০ এবং দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন (চার্জ) করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন। আদালত আগামী ১৯ নভেম্বর এ মামলার বিচারের দিন ধায্য করেন। মামলায় মোট সাক্ষী রয়েছেন ৩৭ জন।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন, এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল (বরখাস্ত) এবাদুর রহমান পুতুল, র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম। গতকাল আসামী গেদা কৌসলির মাধ্যমে জামিনের আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় সিলেট মহানগর হাকিম ১ম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন। ওই অভিযোগপত্রে এই ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ৭ অক্টোবর অভিযোগপত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ অক্টোবর সিলেটের মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নথিপত্র স্থানান্তর করেন এবং ৮ নভেম্বর এই আদালত মাছুমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ও মালামাল ক্রোকের আদেশ দেন। আদেশের একদিনের মাথায় পলাতক আসামী মাছুম ৯ নভেম্বর সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এরপর চার্জগঠনের কয়েকটি তারিখ পরিবর্তন হয়।
আবু সাঈদরে পিতা আব্দুল মতিন আসামীদের ফাঁসি দাবি করে বলেন, নিহত শিশু রাজন হত্যার বিচার যে ভাবে দ্রুত হয়েেছ তেমনি আমার সন্তান আবু সাঈদ হত্যার বিচার যেন এই ভাবে দ্রুত হয় আর হত্যাকারীদরে যেন ফাাঁসি হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মালেক জানান, গতকাল মঙ্গলবার উক্ত ৪ আসামীর উপস্থিতিতে আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৮/৩০ (অপহরণ, মুক্তিপণ ও সহযোগিতা) ও দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ (হত্যা ও সহযোগিতা) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন (চার্জ) করা হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। এরপর পুলিশ ১৩ মার্চ রাতে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝর্ণারপাড় সবুজ-৩৭ নং বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুর, র্যাবের সোর্স গেদা ও ওলামা লীগ নেতা রাকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই তিনজনই আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। নিহত আবু সাঈদ রায়নগর হযরত শাহ মীর (র.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ও একই এলাকার দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের পুত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এড়ালিয়াবাজারের খশিলা এলাকায়। সর্বশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ওলামালীগ নেতা মাসুম। বর্তমানের অভিযুক্ত এই ৪ আসামি সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।