কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিজ্ঞানমনস্ক, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডের দায়িত্ব স্বীকার করেছে আল-কায়েদা (একিউআইএস)। অভিজিতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আরো হত্যাকান্ডের দায়ও দলটির ভারত উপমহাদেশীয় প্রধান আসিম উমর নিচ্ছেন বলে জঙ্গি তৎপরতা যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইটইন্টিলিজেন্ট গ্র“প জানিয়েছে।
এই তথ্য প্রকাশের পর যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটা আমি আপনার মতো সাংবাদিকদের কাছেই শুনেছি। এখনই অফিসিয়ালি (আনুষ্ঠানিকভাবে) কিছু বলতে চাচ্ছি না। আল-কায়েদার এই দাবির বিষয়ে অভিজিৎ হত্যাকান্ড তদন্তে যুক্ত পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার কোনো কর্মকর্তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আল-কায়েদা ইন দি ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের (একিউআইএস) ২ মে এক ভিডিও বার্তায় দলটির আমির উমর অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেন। এদিকে অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু হত্যাকান্ড, বর্ষবরণে নারীদের শ্লীলতাহানি ও সাভারে ব্যাংক ডাকাতির মতো চার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জঙ্গি কানেকশনের খোঁজ পেয়েছে সরকার। দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয়, বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে চাচ্ছে। সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জঙ্গি সংগঠনগুলোর চলমান তৎপরতার স্টাইলে বাংলাদেশেও তাদের অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ও শক্তি প্রদর্শন করার তৎপরতা চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে চারটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৬ ফেব্র“য়ারি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টায় অভিজিৎ মারা যান। এরপর ৩০ মার্চ তেজগাঁও বেগুনবাড়ির দীপিকার মোড়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে (২৭) দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জনগণের সহায়তায় টহলরত পুলিশ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র জিকরুল্লাহ ও মিরপুর দারুল উলুম মাদরাসার ছাত্র আরিফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করে। এ ছাড়া গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে আগত নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন। জানা যায়, এসব হামলার পেছনে জঙ্গি সংগঠন সম্পৃক্ত রয়েছে। এতে বলা হয়, বর্ষবরণের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে নারী সাংবাদিককে তার পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এদিকে গত ২১ এপ্রিল দুপুর আড়াইটা থেকে পৌনে ৩টার মধ্যে ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড কাঠগড়া শাখায় ৭-৮ জনের একটি ডাকাত দল হানা দেয়। এ সময় ডাকাতির ঘটনা পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাইকে ঘোষণা করলে সাধারণ জনগণ ব্যাংকটিকে ঘিরে ফেলে। পরে ডাকাত দল এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে ও বোমা মেরে পালিয়ে যায়। এ সময় গণপিটুনিতে একজন ডাকাত মারা যায় এবং স্থানীয় জনগণ দুই ডাকাতকে আহত অবস্থায় ধরে ফেলে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার মো. অলিউল্লাহ, ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড, ব্যাংকের সামনের দোকানদার মনির হোসেন, গ্রাহক পলাশ এবং জিল্লুরসহ মোট ৯ জন মারা যান এবং ১৫-২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় পরে আরো দুজনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে প্রকাশ পেয়েছে। ঘটনাটি ডাকাতির চেয়ে ব্যাপকভাবে মানুষ হত্যা করে মানুষের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করার উদ্দেশেই করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। এটাকে বড় আকারের কোনো ঘটনা ঘটানোর পূর্বাভাস হিসেবে দেখা যেতে পারে। প্রতিবেদনটির মাধ্যমে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিঘিœত করার জন্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএলসহ দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। এ জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট অনেক দিন ধরে অবরোধ-হরতালসহ দেশ ও সরকারবিরোধী নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচিতে পেট্রলবোমা মেরে ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তবুও সাধারণ জনগণকে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। দেশকে আরো অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এবং সরকারের ওপর বৈদেশিক চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের তত্ত্বাবধানে বা পরোক্ষ সহযোগিতায় জঙ্গি সংগঠনগুলো দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের দীর্ঘদিনের আন্দোলন সতর্কতার সাথে মোকাবিলায় দেশের সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যখন তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চলেছে সেই সুযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি বা মৌলবাদী ইসলামী সংগঠন যেমন : হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি ও হিযবুত তাহরীর তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইএসআইএল নামের আন্তর্জাতিক সংগঠনটি সারা দেশে প্রতিরক্ষা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এসব বিষয়ই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে পাঠানো হবে।