শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে এবার বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা হতাশ। দীর্ঘ খরার পর শিলাবৃষ্টিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তাছাড়া ব্রি-২৮ জাতের ধানের ফলন আশাতীত কম হয়েছে।
হাকালুকি হাওর ও হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ এই বোরো ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, হাওর তীরে বোরো আবাদ করা হয় কুলাউড়া উপজেলায় ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর, জুড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর এবং বড়লেখা উপজেলায় ৮ হাজার ২৩০ হেক্টর। তাছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা মিলিয়ে হাকালুকি হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার হেক্টর। হাওর তীরে বছরে একটাই ক্ষেত। তাই হাওরাঞ্চলে এই বৈশাখ মাসই মানুষের কাছে যেন নবান্ন উৎসব। এবার সেই উৎসব যেন বিবর্ণ। হতাশা কৃষকদের গ্রাস করেছে। হাওর তীরের ধলিয়া বিলের তীরবর্তী কৃষক আব্দুল হাসিম, মুছা মিয়া, আব্দুল মন্নান, আব্দুল বারি, আব্দুল মালিক, ফারুক মিয়া জানান, ৩০ শতক জমিতে ব্রি-২৮ জাতের জমিতে ২ থেকে ৩ মন ধান পাওয়া দুষ্কর। যেখানে প্রতি বছর ফলন হয় ২০ থেকে ২৫ মন। আর আর ব্রি ২৯ জাতের ধানে ফলন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মন। যা হতাশাজনক। ফলে এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
একই চিত্র হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল, মহেষগৌরী, মদনগৌরী, সাদিপুর এলাকায়।
সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩০ শতক জমির ধান কাটাতে ধানকাটা শ্রমিকদের দাবি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এতে অনেক কৃষক ধান না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকরা জানান, প্রতি মন ধান কাটার খরচই পড়ছে হাজার টাকা। হতাশ কৃষকরা অনেকেই আগামী বছর ধান চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘ খরায় পুড়ে ধানের ফলন একেবারেই হয়নি বলেও জানান কৃষকরা। তাছাড়া বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সাথে সাথে শিলাবৃষ্টি শেষতক বোরো ক্ষেতের শেষ ক্ষতিটা করে।
হতাশ কৃষকদের ক্ষোভ কৃষি বিভাগের দিকে। যদি হাকালুকি হাওরে লাখ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হলেও এ নিয়ে যেন কৃষি বিভাগের কোন মাথা ব্যথা নেই। যদি পরিকল্পিতভাবে হাওরের বোরো উৎপাদনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হতো তাহলে আর খরায় পুড়ে উৎপাদন ব্যাহত হত না। আবার বৃষ্টির জন্য চাতকের মত অপেক্ষা করতে হত না।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-সহকারী পরিচালক (শস্য) সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, খরায় তেমন প্রভাব ফেলেনি তবে মওসুমের শুরুতে শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।