মুস্তফা কামাল বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী

149

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মাসিক বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য ব্যাংকার’ বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে ২০২০ সালের জন্য এশিয়া প্যাসিফিক গ্লোবাল এ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত করেছে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকার পত্রিকাটি ১৯২৬ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে, যা পৃথিবীর ব্যাংকিং খাতের জন্য ইন্টেলিজেন্স হিসেবে খ্যাত। তবে গত ২০০৪ সাল থেকে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবদান হিসেবে বাছাই করে একজনকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে পুরস্কৃত করে। এশিয়া-প্যাসিফিক, আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ- এই পাঁচটি অঞ্চল থেকে পাঁচ জন অর্থমন্ত্রীকে এবং তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে দ্য ব্যাংকার। বিশেষ করে সারা বিশ্বের অর্থমন্ত্রীদের আর্থিক খাতে গতিশীলতা আনয়নসহ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপ বিবেচনা করে সার্বিক বিবেচনায় এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বাংলাদেশের কোন অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত বছর এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী। এর আগের বছর ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী এ পুরস্কার পেয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী বিরল এ পুরস্কারটি দেশের সর্বস্তরের সকল জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করেই এটি অর্জিত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়, জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপিকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি ২০১৪-১৮ সময়কালে সফলভাবে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে সচল রাখা ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনয়নে বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা অচিরেই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করাসহ ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। পরপর তিনটি অর্থবছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার পর গত বছর ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তারকারী শীর্ষ ২০টি দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছর অনেক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রীর নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগের মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত, ব্যাংক সুদের হার নয় শতাংশে নামিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ, দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর যৌক্তিক কারণে খেলাপী হওয়া ঋণ পুনঃতফসিলকরণের উদ্যোগ গ্রহণ, তৃতীয়ত, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের দেউলিয়া ঘোষণাসহ তাদের সম্পদ ‘এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’র মাধ্যমে গ্রহণ করা। চতুর্থত, ব্যাংকের পরিবর্তে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ, পঞ্চমত, বন্ড মার্কেট চালুর উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রথমবারের মতো বাংলা টাকা বন্ড লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এ তালিকাভুক্তকরণ, ষষ্ঠত, কর আদায়ে ভ্যাট আইন চালু করা, কাস্টমস আইন সংস্কার করা এবং আয়কর আদায়ের নেট উপজেলা পর্যন্ত বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহণ, সপ্তমত, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এই পুরস্কার প্রাপ্তির ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
উল্লেখ্য, আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেট সংগঠক। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এছাড়া আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৪-১৫ মেয়াদে আইসিসির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।