মোঃ শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা। গত কয়েক দিন ধরে জগন্নাথপুরে থেমে থেমে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে হাঁটু ও কোমর পানি হয়ে গেছে। সেই সাথে হাওরের ছোট ছোট কাঁচা রাস্তাগুলো কাদায় পরিণত হয়েছে। দিন ব্যাপি থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ও জমিতে পানি থাকায় ঠিকমতো ধান কাটতে পারছেন না শ্রমিকরা। রাস্তায় কাদা থাকায় হাওরে ধান মাড়াই মেশিন ও ধান আনার জন্য কোন যানবাহন যেতে পারছেন না। ফলে জমিতে কাটা ধান জমিতেই থেকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে শ্রমিকরা নিজে কাদে করে কিছু ধান শুকনো স্থানে নিয়ে আসলেও রোদের অভাবে মাড়াই করা ধান চারা গজিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে জমির পাকা ধান গোলায় তোলা নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা।
জানাগেছে, জগন্নাথপুরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফসল হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওর, মইয়ার হাওর, মমিনপুর হাওর, দলুয়ার হাওর, পিংলার হাওর, রাণীগঞ্জ হাওর, সৈয়দপুর হাওর, নারিকেলতলা হাওর, পাইলগাঁও হাওরসহ উপজেলার প্রতিটি হাওরে উৎপাদিত বোরো ধান শতভাগ পেকে গেছে। কখন জানি শিলাবৃষ্টি হয়ে জমির পাকা ধানে মই দিয়ে যায়, এমন আশঙ্কায় সারাক্ষন শঙ্কিত থাকেন কৃষক-কৃষাণিরা। তবে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানাগেছে। বাকি ৭০ ভাগ ধান নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা। নলুয়ার হাওরপাড়ের ভূরাখালি গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথপুর উপজেলা হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান জানান, জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার ফসল হওয়ায় আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সকল আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ও হাওরের রাস্তাগুলো কাদায় পরিণত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা। জমিতে পানি থাকায় শ্রমিকরা ধান কাটতে চায় না। ধান কাটলেও কাদার কারণে হাওরে কোন গাড়ি না যাওয়ায় ধান আনা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু কিছু ধান আনা হলেও রোদের অভাবে মাড়াই করা ধান গ্যাড়া উঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার গন্ধর্বপুর গ্রামের কৃষক আলা উদ্দিন, আলখানারপাড় গ্রামের কৃষক তৈমুছ খান, চিলাউড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর, গোলজার মিয়া ও ফজলু মিয়াসহ অনেকে জানান, টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় জমির পাকা ধান কাটাতেও পারছিন না আবার কাটালেও বাড়িতে আনতে পারছি না। কিছু ধান বাড়িতে আনলেও রোদের কারণে মাড়াই করা ধান নষ্ট হচ্ছে। তার উপর শিলাবৃষ্টির ভয়ে জমির পাকা ধান নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। কখন জানি শিলাবৃষ্টি এসে জমির বাকি পাকা ধান নষ্ট করে দেয়।