দীর্ঘশ্বাস মোচন করে লিখতেই হচ্ছে যে, কেউ কথা রাখেনি- না সরকার না পাবলিক। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কঠোর লকডাউনের কথা বললেও তা বাস্তবায়ন করেনি। অন্যদিকে সরকারী প্রশাসন করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কর্মজীবীদের স্ব স্ব কর্মস্থলে অবস্থান করে উৎসব পালনের কথা বার বার বললেও প্রায় কেউই তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং দূরপাল্লার বাস ট্রেন লঞ্চ স্টিমার না চললেও দলে দলে মানুষ পড়িমরি ছুটে গেছেন গ্রামের বাড়ি- তা সে নাড়ির টানেই হোক, অথবা হোক না ঈদ-উৎসব পালন উপলক্ষে। এতে যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে বহুলাংশে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। লঞ্চ-স্টিমার বন্ধ থাকায় দলে দলে মানুষ নদী পাড়ি দিয়েছে ফেরিতে। ফলে ব্যাহত হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও এ্যাম্বুলেন্স চলাচল। অন্যদিকে হিটস্ট্রোক, দুর্ঘটনা এবং পায়ে দলে একাধিক মৃত্যুর খবরও আছে, যা দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকে বলছেন বরং সবরকম যানবাহন চলতে দিলেই ভাল হতো, অন্তত পরিস্থিতি এতটা গুরুতর হতো না। এখন সরকার আবার তাদের রাজধানীসহ অন্যত্র কর্মস্থলে আগমন প্রতিরোধে লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছে ২৩ মে পর্যন্ত, যা প্রলম্বিত হতে পারে ৩০ মে অবধি। তবে তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষ আসতে শুরু করেছে যে যেভাবে পারে সেভাবেই। ফেরিতেও ভীড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লঞ্চ-স্টিমার-ট্রেন-বাসসহ সবরকম যানবাহন খুলে দেয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তা না হলে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার বিষয়টি আমলে নেবে বলেই প্রত্যাশা।
রাজধানী ও আশপাশের এবং বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামেরও অধিকাংশ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী প্রধানত বহিরাগত। ফলে ঈদের ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পড়িমরি করে যে যেভাবে পারে হয়ত ছুটে যাবে গ্রামের বাড়িতে। এ সময়ে কার্যত দূরপাল্লার যানবাহন ট্রেন ও নৌচলাচল না চললেও মানুষ একটা না একটা উপায় বের করে নিয়েছে। সুতরাং লাখ লাখ শ্রমজীবীর কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা থাকবেই। সর্বস্তরের মানুষের এই দুর্ভোগ সত্যি বলতে কি অকহতব্য, অসহনীয়। যা হোক, আমরা আশা করব, করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় তাহলে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ট্রেনসহ সব রকম যানবাহন চলতে দেয়া হোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে দুর্ঘটনাসহ যে কোন ঝুঁকি ব্যতিরেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রেল নৌ ও যানবাহন কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারী পরিবহন মালিকদেরও সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তখন যেন কোনক্রমেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।