স্টাফ রিপোর্টার :
২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের ৪র্থ দিনে সিলেট গতকাল নগরীতে শিবিরের ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্যে দিয়ে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। নগরী ও শহরতলীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি হরতাল সমর্থকদের কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। ভোর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে রিকশা ও সিএনজি অটোরিক্সাসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। নগরীর কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করলেও আন্তঃজেলা এবং দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলেছে দোকানপাট।
নাশকতা এড়াতে সিলেট নগরী জুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোর থেকেই নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে গাড়িযোগে টহল দিচ্ছেন তারা। মাঠে রয়েছে বিজিবিও। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার নগরীর রাজপথে ফের নেমেছে সাজোয়াযান বা আর্মোড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি)।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে নগরীর পূর্ব সুবিদবাজার সুরমা এন্টারপ্রাইজের সামনে (ঢাকামেট্রো-ন-১৮-০৯৫৬) নং পিকআপ ভ্যানে টাইলসের মাল আনলোড করছিল। এ সময় একটি মোটর সাইকেল যোগে ২/৩ জন দুর্বৃত্ত গাড়ীর সামনে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরে পালিয়ে যায়। সাথে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে গাড়ীর বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি। গাড়ীটি টাইলসের মাল নিয়ে নবীগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানার এসসি সাজ্জাদুল আলমসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুপুর ২টার দিকে বন্দরবাজার হকার পয়েন্টের কাছে শিবির নেতাকর্মীরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা একটি সিএসজি চালিত অটোরিক্সা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল ১০টার দিকে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় কয়েকজন শিবির নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ঝটিকা হামলা চালায়। এ সময় তারা একটি ট্রাক ও ২টি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুর করে। গাড়ি ভাংচুর শেষে পালানোর সময় শিবির নেতাকর্মীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অপরদিকে, ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে এতোদিন সাঁজোয়া যান বা এপিসি’র টহল খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে গতকাল বুধবার হরতাল, অবরোধের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর আবদুস সোবহানের ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই সিলেট নগরীর রাস্তায় নামানো হয় এপিসি। পুলিশ ও বিজিবির নিয়মিত টহলের পাশাপাশি এপিসি দিয়ে টহলও জোরদার করা হয় নগরীতে। গতকাল নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, তালতলা, চৌহাট্টা, শেখঘাট, রিকাবীবাজার, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে সাঁজেয়া যান নিয়ে পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, গতকাল দুপুরে বন্দরবাজারে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে শিবির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে, শিবিরের নাশকতার খবর পেয়ে কুমারপাড়ায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ভাংচুরের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত ৭২ ঘণ্টার হরতাল গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন ঘোষণায় তা কাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ হরতালের সময় বাড়ানোর বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।