নামেই ২০ দল, মাঠে দুই দল ॥ সিলেটে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন

22

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নামেই ২০ দল, মাঠে আছে শুধু দুই দল। চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে সিলেটের রাজনীতির মাঠে বিএনপি-জামায়াত ছাড়া বাকি ১৮ টি দলেরই কোনো তৎপরতা নেই। পিঠ বাঁচাতে বিএনপির আন্দালনে ২০ দলীয় জোটের বাকি ১৮ টি দলের নেতারাই ডুব দিয়ে বসে আছেন।
সিলেটের ২০ দলীয় জোট সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চলমান লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ৪২ দিন চলছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাই সিলেটের রাজপথে তৎপর রয়েছেন। কিন্তু এই বড় জোটের বাকি ১৮টি দলেরই কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। সিলেটে ইসলামি ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ২০ দলের শরীক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামি ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস সক্রিয় থাকে। এছাড়াও বিএনপির অনুকূল পরিবেশে নানা সমাবেশে এই দলগুলোর নেতাদের মাঠে দেখা যেতো। বিশেষ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যথেষ্ট কর্মী সমর্থক রয়েছে। কিন্তু সিলেট মহানগর বা জেলার কোথাও দলগুলো মাঠে নেই। শুধমাত্র বিএনপি-জামায়াতই অঙ্গসংগঠন নিয়ে চলমান কর্মসূচি পালন করছে। এই জোটের আরও শরীকদের মধ্যে লেবারপার্টি, কল্যাণপার্টি, ইসলামিক পার্টি, জাগপা ও এলডিপির কমিটি থাকলেও সিলেটে মাঠে তাদের দেখা যাচ্ছে না। টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার আগে গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে কল্যাণপার্টি ও লেবারপার্টি সিলেটে গোপনে বৈঠক করেছিল। তবে, পুলিশ তাদের বৈঠকে অভিযানে গেলে আত্মগোপনে চলে যান দলগুলোর সিলেটের নেতারা। বর্তমানে সিলেটে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ শ খানেক নেতারা কারাগারে বন্দী। যারা বাইরে আছেন, তারা গ্রেফতার আতঙ্কে থেকেও মাঠে চোরাগোপ্তা হামলা ও ঝটিকা মিছিল করছেন। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের বাসা-বাড়িতে প্রতিরাতেই পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন। এই দুই দলের নেতামকর্মীদের উপর এসএমপির ছয় থানায়ই একাধিক মামলা রয়েছে। ঠিক তখন ২০ দলের বাকি শরীক ১৮টি দলের নেতামকর্মীরা বেশ স্বস্তিতেই আছেন। এসব দলের কোনো নেতাকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হয়নি।
২০ দলীয় জোটের শরীকদের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে মূলত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জামায়াতের পরই জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ও ইসলামি ঐক্যজোটই দৃশ্যমান শরীকদল। বাকি ছোট ছোট দলগুলোর অস্তিত্ব ঢাকা ভিত্তিক। সিলেটে এখনো দলগুলোর অবস্থান মজবুত হয়নি। এছাড়া এসব ছোট দলের বড় নেতারা বর্তমান সময়ে নিজের গা বাঁচিয়ে চলছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এক নেতা জানান, ইসলামি ইস্যু হলে ইসলামের স্বার্থে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই মাঠে নামতে পারেন। জোটের শরীক হিসেবেও তারা চলমান আন্দোলনে মাঠে নামতে পারতেন, যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হতো। জামায়াতের নাশকতার সাথে তারা একমত নন। আর মাঠে নেমেও টিকে থাকা মুশকিল হবে। তাই তারা মাঠে নামছেন না।
যোগাযোগ করলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশ নেই। মিছিল-সমাবেশের অনুমতি নেই। তারা ইচ্ছা থাকলেও আমরা মাঠে নামতে পারছি না। তবে জোটের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একমত আছি।’
ইসলামি ঐক্যজোট সিলেট জেলার সভাপতি মাওলানা আসলাম রহমানী বলেন, মিছিল-সমাবেশের অনুমতি নেই। আমরা মাঠে নেমে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করতে পারবো না। এতে পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করা হবে। তাই মাঠে নেই। তবে, পরিবেশ ফিরে এলে মাঠে সমাবেশ করতে নামবো।’