তুমি রবে নীরবে॥ স্মরণে জননেতা পীর হবিবুর রহমান

117

Photo Pir Habibur Rahman(1)সৈয়দ বেলায়েত আলী লিমন

প্রখ্যাত জননেতা পীর হবিবুর রহমানের ১১তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। জননেতা পীর হবিবুর রহমান ১৬ ফেব্র“য়ারী ২০০৪ইং সালে  এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জননেতা পীর হবিবুর রহমান আমার শ্রদ্ধেয় দাদা ও আদর্শ ব্যক্তি, আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুইটি কথা লিখতে যাচ্ছি। দাদা ছিলেন গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের আশ্রয়স্থল তার কন্ঠে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মেহনতী মানুষের কথাই উচ্চারিত হয়েছে বার বার তার মতো নির্লোভ সজ্জন ব্যক্তি আমাদের রাজনীতিতে এমন বিরল, তবে দাদার রাজনীতি জীবন নিয়ে লেখার দুঃসাহস আমার নেই। দাদার সান্নিধ্যে ছিলাম বলে দেশের রাজনীতির কিছু প্রেক্ষাপট জানতে পেরেছি। উনার ব্যক্তি জীবন সাদামাটা কাটালে রাজনীতি জীবন ছিল অনেক বর্ণাঢ্য। তিনি আমাদের এই পৃথিবীকে কলঙ্কমুক্ত করতে চেয়েছিলের আজীবন তিনি একটি অসম্প্রদায়িক ও ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজের সংগ্রাম করেছেন। এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে তার সে সম্পর্ক ছিল বর্তমান রাজনীতিবিদদের মধ্যে নেই।
দাদা পরিবার পরিজন কথা আলাদাভাবে ভাবতেন না। সমগ্র দেশবাসীর কথা একই পরিবার হিসেবে চিন্তা করতেন। দাদা দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু কোনবারই নমিনেশন পেপার স্বাক্ষর করেন নি। ক্ষমতার রাজনীতি পছন্দ  করতেন না বলেই এমপি, মন্ত্রী হতে চাইতেন না। আজ বাংলাদেশে ক্ষমতার লড়াই নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিরোধ। জীবনের শুরুতেই মানুষের মুক্তির যে দায় তিনি নিয়েছিলেন, সে দায় আজীবন বহন করেছেন। জাতীয় রাজনৈতিক সংকটকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত শুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রাখেন।
দাদার সংস্পর্শে ছিলাম বলে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কথা দাদার মুখ থেকে শুনেছি। দাদা ছিলেন এমন এক রাজনৈতিক যিনি নিজে যা বিশ্বাস করতেন তা অকপটে বলার সৎ সাহস রাখতেন। দাদা বলেছেন রাজনৈতিক বিভিন্ন কৌশল নিয়ে বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করতেন সামনা সামনি। রাজনীতিতে দুই জনের দুই দলে অবস্থান হলেও তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ট। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় দেশ পরিচালনায় আওয়ামীলীগের কৌশল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে মতোবিরোধ হতো তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন বিষয়ে সুপরামর্শ দিতেন। তবে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কখনও ফাটল ধরেনি।
বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্টতার কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্নেহের ভাতিজি হিসেবে সম্বোধন করতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদাকে চাচা বলে সম্বোধন ও সম্মান করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদাকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছেন, চাচা আপনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন যেকোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েও আপনি নির্বাচন করুন। যে আসন থেকে নির্বাচন করবেন সেখানে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী অংশগ্রহণ করবে না। আপনার মত আদর্শবান লোক সংসদে খুবই প্রয়োজনীয় কিন্তু দাদা শেখ হাসিনা অনুরোধ রাখতে পারেন নি। দাদা বলেছিলেন শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় যায় তবে স্নেহের ভাতিজিকে দেশ পরিচালনায় ভুলত্র“টি তুলে ধরে দিতে পারব না। কিন্তু তৎকালীন সময় আওয়ামীলীগ বিজয়ী হল এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। কিন্তু দাদার দায়িত্ব আরও বেশি বেড়ে গেলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনায় সু পরামর্শের জন্য ফ্যাক্স বার্তা সহ- বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করতেন শেখ হাসিনাও সুপরামর্শ নিতেন।
আজ এ কথা লেখার কারণ হলো দেশে আজ দুমাস অতিবাহিত হতে যাচ্ছে রাজীনতিক অস্থিরতা বিরাজ করেছে কিন্তু সমাধানের পথ বাহির হচ্ছে না। আজ জননেতা পীর হবিবুর রহমানের মতো লোকের খুবই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
দাদা কখনো নীতির আপস করেনি তাই রাজনীতির নষ্ট খেলায় তার বিশ্বাসের ভিত একটুও কাঁপেনি। তার সমকক্ষ যেমন কেউ নেই তেমনি তার বিকল্প তিনি নিজেই। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবর্তে পার্লামেন্টই সকল সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র। তিনি যুদ্ধকে ঘৃণা করতেন।
দাদার মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ দাদাকে বিভিন্ন ভাবে উপাধি দিয়েছিলেন। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন ভারতের মহাত্মা গান্ধী, সীমান্তে সীমান্ত গান্ধী, পীর বহিব ছিলেন বাংলার গান্ধী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মালোয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহথির এর সাথে তুলনা করেছেন। লন্ডনে মৃত্যুবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী বলেছিলেন পীর হবিবুর রহমান এমন এক রাজনীতিক যিনি সর্বভারতীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখতেন। কিন্তু নিজের মাটি ও মানুষকে ছাড়তে পারেন নি বলে ৫০এর দশক থেকেই একজন খ্যাতিমান নেতা হওয়া সত্তেও পুর্ব বাংলার রাজনীতির মাঠ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
দাদা আজীবন ছিলেন প্রচার বিমুখ নিজেকে তিনি দেশের সাধারণ মানুষের একজন মনে করতেন তাই ৯০ ভাগ মানুষ যে কাপড় পরিধান করতো সেই লুঙ্গি, পাঞ্জাবী পরেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেতন।
দাদা বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে ছিলেন প্রথম সারির উদ্যোক্ততা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নিজের  জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশ দেশ বলে কেঁদে গেছেন। কিন্তু আজ দেশ ও জাতির কাছে প্রশ্ন একজন জাতীয় মহান নেতার মৃত্যুবার্ষিকী হয় নীরবে। তুমি রবে নীরবে।