শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
জনবল সংকট সহ বিভিন্ন কারণে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্যয় কমপ্লেক্সে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা এবং নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা পেতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসা নিম্ন আয়ের মানুষ। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্যয় কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০০২ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করার পরও এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত হয়নি। ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৪ লক্ষাধিক জনসাধারণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী এই উপজেলা স্বাস্থ্যয় কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী আসেন জরুরি বিভাগে। আবাসিক বিভাগে রোগী ভর্তি হন গড়ে ৪০-৪৫ জন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন দেড় সহস্রাধিক মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যয় কমপ্লেক্সে ৩৮ চিকিৎসক পদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ২ জনসহ আবাসিক চিকিৎসক আছেন ১০ জন। অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে ২-৩ জন চিকিৎসক প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠির সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা উপজেলার সাধারণ মানুষ।
সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্যয় কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, যাবতীয় সরঞ্জাম থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে গাইনী বিশেষজ্ঞ অনুপস্থিত থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নিরাপদ প্রসব কার্যক্রম। এছাড়াও টেকনিশিয়ান না থাকায় অকেজো পড়ে আছে এক্স-রে মেশিনটি। জরুরি বিভাগের অবস্থার জরাজীর্ণ এবং রোগী বহনকারী স্ট্রেচারটিও নষ্ট। নেই কোন ট্রলি কিংবা হুইল চেয়ার। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পড়ে আছে খোলা জায়গায়। আলমারি ও বিছানা ফেলে রাখা হয়েছে যত্রতত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের ডা. রহিমা আক্তার ২০০৮ সালে কর্মস্থলে যোগদান করেন। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে বন্ধ রয়েছে নিরাপদ প্রসব কার্যক্রম। আরোও জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১৯৯৫ সালে এক্স-রে মেশিনটি উদ্বোধন করেন। এর ৩ বছর পর ১৯৯৮ সাল থেকে টেকনিশিয়ান পদটি শূন্য থাকায় এক্স-রে মেশিনটি পরিচালনার অভাবে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানালেও কাজ হচ্ছে না। এছাড়াও গত এক বছর ধরে নতুন ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) মেশিন প্রদান করা হলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে সেটিও অলস পড়ে আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ রহিমা আক্তার বেগম অনুপস্থিত থাকায় হাসপাতালে কোন ডেলিভারি (প্রসূতি) রোগী এলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মৌলভীবাজার অথবা সিলেটে প্রেরণ করা হয়। উচ্চ মধ্যবিত্তরা চিকিৎসা সেবা নিতে প্রাইভেট ক্লিনিক বা মৌলভীবাজার সিলেটে চলে যান। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ উপায়ান্তর না দেখে ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এদিকে দীর্ঘদিন থেকে টেকনিশিয়ান না থাকায় মূল্যবান এক্সরে মেশিনটি একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে ও ইসিজি মেশিনটিও পড়ে আছে টেকনিশিয়ানের অভাবে। ফলে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে দ্বারাস্থ হন প্রাইভেট ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোতে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্যয় ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহজাহান কবির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কুলাউড়ায় যোগদানের পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন এবং সর্বশেষ গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যয় অধিদপ্তরের ডিজি বরাবরে সরাসরি ফোনে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তিনি আরও জানান, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডাঃ রহিমা আক্তার বেগম গত মাসে তাঁর কাছে অব্যাহতিপত্র দিয়েছেন। এ পদের নতুন কনসালটেন্টসহ বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগ দেয়ার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।