শহরতলীতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ ও গলা কেটে হত্যা ॥ ৪ বছরের শিশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

49

স্টাফ রিপোর্টার :
শহরতলীতে এক পুত্র সন্তানের জননীকে শ্বাসরুদ্ধ ও গলা কেটে হত্যা করেছে এক পষান্ড স্বামী। পীরেরচক গ্রামের জনৈক সেলিম মিয়ার ভাড়াটে বাসার নিজ ঘরে গত ২৯ ডিসেম্বর সোমবার সকাল হতে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম- লিপি বেগম (৩২)। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাবরানগ্রামের মোঃ আব্দুল মজিদের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি স্বামী পুত্র সন্তানকে নিয়ে শাহপরান থানার পীরেরচক গ্রামের জনৈক সেলিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে বাসার বাসিন্দা ছিলেন। লিপি স্থানীয় পরগনাবাজারের জনৈক বকতিয়ার মিয়ার দিলকম নামে টাইলস্‘র ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। ঘটনার পর থেকে ঘাতক স্বামী মোঃ আব্দুল মজিদ (৩৬) পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত লিপির ভাই মোঃ টিপু আহমদ বাদি হয়ে একমাত্র ঘাতক আব্দুল মজিদকে আসামী করে শাহপরান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ২০ (৩০-১২-১৪)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোঃ চাঁন মিয়া জানান, গতকাল বুধবার সকাল ১০ টার দিকে নিহত লিপির ৪ বছরের একমাত্র সন্তান রিফাত আহমদকে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দেয়ার জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের বিচারক মোঃ আনোয়ারুল হকের আদালতে আবেদন জানায়। এ সময় আদালতের বিচারক রিফাতের ফৌদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
রিফাত আহমদ জবানবন্দীতে জানায়, আমার আব্বা কাম করুইন্না খালি চক্কর দেয়। আমার আব্বা আমার আম্বার সাথে খালি দরবার করেইন। ঘটনার দিন সকালে আব্বা আম্বার সাথে দরবার করছুইন। আমি দরজার সামনে ক্রিকেট ব্যাট নিয়া খেলাতেছিলাম। আমার আম্মা এমন চিকদিছুইন আমি দৌড়াইয়া আইছি এবং দরজার কানাবাই দেখছি। সে আদালতকে আরো জানায়, দা দিয়া আমার আব্বা আমার আম্বার গলায় ছেদ মারে। মারার পরেই আমার আব্বা ঘর থেকে বের হয়ে বিড়ি আনার কথা বলে দোকানে যায়। আমার আম্বা এখন আল্লাহর বাড়ি মাটির তলে গেছুইনগি। প্রত্যক্ষ শিশু সাক্ষী রিফাতকে গতকাল কোর্টে আনা হলে তাকে অত্যন্ত চটপটে মনে হয়। সে সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রত্যেকটি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়ার পর রিফাতকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, নিজ নাম লিখতে পারে কি না? সে উত্তর দেয় পারে। পরে রিফাত তার জবানবন্দীর নথিতে স্বাক্ষর দেয়। পুলিশ এর পর তার মামা ও মামলার বাদি টিপু আহমদের জিম্মায় রিফাতকে দেয়া হয়। এসআই চাঁন মিয়া আরো জানান, আসামী আব্দুল মজিদকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০০৮ সালে শাহপরান থানার চকগ্রামের মৃত ছমেদ আলীর কন্যা লিপি বেগমের সাথে মোঃ আব্দুল মজিদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মজিদ লিপিকে কারনে অকারণে নির্যাতন করে আসছিল। এর মধ্যে তাদের সংসারে রিফাত আহমদের জন্ম হয়। মজিদ কোন কাজকর্ম করত না। বখাটের মতো ঘুরাঘুরি করে আসছিল। এক পর্যায়ে সংসার চালাতে লিপি বেগম স্থানীয় পরগনাবাজারের জনৈক বকতিয়ার মিয়ার দিলকম নামে টাইলস্‘র ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সংসার চালাত। গত ২৯ ডিসেম্বর সোমবার সকাল হতে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে যে কোন সময় পীরেরচক গ্রামের জনৈক সেলিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে বাসার ঘরে মজিদ স্ত্রী লিপিকে দা দিয়ে গলা কেটে ও শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লিপির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরে পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেছে।