॥ পিন্টু দেবনাথ ॥
৭১ এর মহান স্বাধীনতার পরবর্তীতে আমার জন্ম। স্বাধীনতা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে গণমাধ্যমে কাজ করি হিসাবে স্বাধীনতা, ২১ ফেব্র“য়ারী, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বই পুস্তক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ সর্বোপরি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়েছে। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ এবং বাংলার মানচিত্র। যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৩ বছর পর তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা ভাববার বিষয়।
মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যদি ছুটে চলি তাহলে দেখতে পাই না খাওয়া মানুষের দীর্ঘ মিছিল। এখনও অনেক মানুষের শরীরে রয়েছে ছেঁড়া কাপড়। বাসস্থানহীন ভাসমান মানুষের ভিড়। চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ মানুষ। তারপর শিক্ষা। অনেক শিক্ষার্থীরা অভাবের তাড়নায় শিক্ষা গ্রহণ না করে কলকারখানা, হোটেল রেস্তোরা, ওয়ার্কশপ এমনকি রিক্সা চালিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করে কোন রকমে জীবন ঠিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ, ছাত্র, দামাল ছেলেরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অনেক মা বোন ইজ্জত হারিয়েছেন, অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। আজও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছেন। অনেক যোদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক মা বোন ৭১ সালের সেই দু:সময়ের স্মৃতি আজও বুকে ধারণ করে আছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন প্রভা রানীরা।
সম্প্রতি ৯ ডিসেম্বর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কমলগঞ্জ উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের আয়োজনে বেগম রোকেয়া দিবসে জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫ জন জয়িতার মধ্যে নির্যাতিত স্বীকৃতিহীন বীরাঙ্গনা প্রভাসিনী মালাকার (প্রভা রানী) মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিভাবে তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন তা বর্ণনা করেন। স্মৃতি রোমন্থনের এক পর্যায়ে হাউ মাউ করে কেঁদে বলে উঠেন “যুদ্ধর সময় আমি কত কষ্ট করছি, আমারে পাঞ্জাবীরা কয়েকবার নির্যাতন করছে।
একবার চাইছলাম দৌড়িয়া যাইতাম গিয়া, তারার আত লাম্বা বন্ধুক থাকায় গুল্লি করি দিব অউ ভয়ে দৌড় দিছিনা—–। স্বাধীতার ৪৩ বছর পার অইগেছেগিয়া আইজও আমি বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাইছিনা, বীরাঙ্গনার একটা কার্ডও পাইছিনা। অখনও মাথার মাঝে টুকরি লইয়া গাও করি—– হুক্কলর হয় কার্ড, আমার হয়না এত কষ্ট করার চাইতে আমার মরি যাওয়া ভালা আছিল।”
সেই অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। প্রভা রানী সেই শোকের অশ্র“ দেখে উপস্থিত সকলেই নীরব হয়ে যান। কারও কারও চোখের অশ্র“ বিন্দু চলে আসে। কি জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছিল? কি জন্য স্বাধীন সার্বভৌমত্ব একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশের মানুষ ! একমাত্র মানচিত্র ছাড়া আমরা কিইবা পেলাম। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেই সংগ্রাম সা¤্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী লড়াই এর মধ্য দিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়নি বিধায় আজও সেই স্বাধীনতার সুফল দেশের অধিকাংশ মানুষ ভোগ করতে পারছেনা।
তবে বর্তমান স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে। এটা সত্যি একটা ভাল দিক, প্রশংসার দাবী রাখে। একটা ভিশন নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। এই ভিশন বাস্তবায়ন হলে মানুষ কতটুক স্বাধীনতার স্বাদ পাবে এটা ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিলাম।
সত্যিকারের শ্রমিক, কৃষক, নিপীড়িত জাতি ও জনগণ যদি সা¤্রাজ্যবাদ সামান্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় তাহলেই এদেশের মানুষ সুখী সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার পথ খুঁজে পাবে বলে বিশ্বাস করেন জনগণের কল্যাণে নিবেদিত সত্যিকারের দেশ প্রেমিকেরা।
মহান বিজয়ের মাসে সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে গণমানুষের কল্যাণ সাধিত হউক আর বিজয়ের স্বাদ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক এটাই আজকের দিনের প্রত্যাশা।
লেখক: পিন্টু দেবনাথ, সম্পাদক, কমলকুঁড়ি পত্রিকা, সভাপতি, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।