কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলসমূহ, সরকার বিরোধী ২০ দলীয় জোট, বাম সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরপরও শাসকগোষ্ঠী নীতিগতভাবে সিদ্বান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু সরকার একতরফাভাবে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে সেহেতু জনগণের প্রতি তাদের দায়দায়িত্ব নেই। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অনুগত ব্যবসায়ী ও দলীয় লোকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার উঠে পড়ে লেগেছে।
জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলীয় জোটের এক বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ক্ষমতাসীন জোটের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিমসহ সিনিয়র নেতারা সরকারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মতো এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করে দেন। এ সময় সরকার সমর্থক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে জনগণের ব্যয় বাড়বে। এতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারকারী সব দল ও মতের মানুষের সমর্থন হারাবে সরকার। তারা দাম বাড়ানোর পরিবর্তে অপচয় রোধ ও যথাযথভাবে মূল্য আদায় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।
১৪ দলের শরিক নেতারা গ্যাসের অপচয় রোধে শহরের বাসা-বাড়িতে মিটার বসানোর প্রস্তাব দেন। আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে সিস্টেম লস কমানো ও চুরি ঠেকানোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।
গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জনস্বার্থে ও উন্নয়নের চাকা সচল করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে। এ নিয়ে বিএনপিকে কোনো আন্দোলন করতে দেয়া হবে না।
আফসানা খানম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তিনি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ কাকে খুশি করতে চায়? বছরে দুইবার যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আমাদের ঢাকা শহরে থাকায় দুরূহ হয়ে যাবে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বাড়ছে। বাড়ির মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর অজুহাত সৃষ্টি হবে।
তিনি নিজেকে আওয়ামী পরিবারের একজন সদস্য দাবি করে বলেন, আমাদের সঙ্গে সহকর্মীরা আওয়ামী লীগের একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসি-তামাশা করে।
মনির হোসেন নামে একজন জানান, সরকার কাদের স্বার্থে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এ অবৈধ সরকার যেদিন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেবে সেদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, বর্তমান সরকার ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। এ সরকারের প্রতি জনগণের যেমন সমর্থন নেই, তেমনই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়দায়িত্বও নেই। একারণে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা করছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে দেশে গণবিদ্রোহ হবে বলেও উল্লেখ্য করেন তিনি।
গত ৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। অনুগত ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া ও দলীয় লোকদের কুইক মানি অর্জনে সহায়তা করতে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ ও জনগণ রসাতলে গেলে সরকারের তাতে কিছু আসে যায় না। সরকার জনগণের চাইতে ডোনারদের পকেট ভারী করতে বেশি তৎপর বলে মনে করেন এ তরুণ রাজনীতিক।
তিনি আরো বলেন, সরকার যেহেতু বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসেছে তাই তাদের ধারণা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ কেউ করবে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চলতি বছরের মার্চ মাসে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আবার তারা একই বছর মূল্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন যেদিন গণশুনানি শুরু করবে সেদিনই তাদের ঘেরাও করা হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৮ ডিসেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণসংহতি আন্দোলন। প্রয়োজনে হরতাল দেয়া হবে বলেও উল্লেখ্য করে সংগঠনটি। এরপরও সরকার মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে বিরত না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনাও রয়েছে সংগঠনটির।