সংবাদ সম্মেলনে বাদীর অভিযোগ : ছাতকে লায়েক মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা চলছে

13

স্টাফ রিপোর্টার

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলীভোগের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা লায়েক মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ তাঁর।
বুধবার নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ মার্চ আমার ভাইকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আসামিদের মামলা থেকে রক্ষা করতে এখন নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে। স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এখন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই, মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। নিজের ভাই আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং চোরাকারবার ও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করায় হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে তিনি।
আজিজুল বলেন, লায়েক মিয়া উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। একাধিকবার পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় তিনি সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে মাদক সিন্ডিকেট ও চোরাচালানের হুতা স্থানীয় কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুছ শিপলু, হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা এমপি মানিকের ভাতিজা ইশতিয়াক রহমান তানভির, সাদমান মাহমুদ সানি ও আলা উদ্দিনগংদের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ ও মাদক, চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কাজে বাধা দেওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ঘটনার পর ১৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ দেওয়া হলে মামলা রুজু করতে পুলিশ মামলা নিতে কালক্ষেপন এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে, এলাকার লোকজন আন্দোলনের ঘোষণা দিলে ৩১ মার্চ ছাতক থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে।
মামলার প্রধান আসামি মাদক ও চোরাকারবারি আব্দুল কুদ্দুস শিপলুর জামিন এবং অন্য আসামিরা গ্রেপ্তারে পুলিশের অবহেলার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গত ৫ ফেব্রæয়ারি আরেক ভাই এখলাছ মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ভাই লায়েক বাদী হয়ে শিপলু গংদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে গত ২৮ মার্চ শিপলু, তাপস গংরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার ভাইকে খুন করেছে। এখন আমাদের পরিবারের অন্য কাউকেও হত্যার করতে পারে তারা।
আজিজুল ইসলাম বলেন, শিপলু ছাতকের চোরাচালান ও মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলর তাপসের প্রধান সহযোগী। শিপলুর দোকান ঘরে হত্যার কয়েকদিন আগে ১০০ বস্তা চোরাচালানের চিনি পাওয়া গেলেও পুলিশ নাটকীয়তার মাধ্যমে তাকে রক্ষা করে। ওই চিনি ধরিয়ে দিতে আমার ভাই লায়েক অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন।
তিনি আরও জানান, এ চক্রটি গত ২০২১ সালের ৪ জুলাই ছাতকে নৌ-পুলিশের উপর হামলা করে। এতে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় র‌্যাব-৯ ঢাকা থেকে তাপস, সানি, আলা উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১৫ মে একই সন্ত্রাসী গ্রæপ পুলিশের উপর গুলিবর্ষণ করলে তৎকালীন ওসিসহ কয়েকজন আহত হন। মামলাটি বিচারাধীন।
হত্যাকাÐের আগে সাদমান মাহমুদ সানির বাড়িসহ একাধিক স্থানে খুনিরা বৈঠক করে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাার আগের দিন এমপি মানিকের বাসার পাশে তার ভাই মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্টিত ‘মুজিবুর রহমান একাডেমিতে’ বৈঠক করা হয়। বৈঠকে পরিকল্পনা করে পরদিন আমার ভাইকে প্রকাশ্যে গোদারাঘাটে খুন করা হয়।
একাধিক আসামি ভারতে চলে গেছে বলে মনে করেন আজিজুল ইসলাম। কয়েকদিন পর এমপি মানিকও ভারতে গিয়ে আসামিদের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রধান আসামিকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনের ব্যবস্থা করেন বলে সন্দেহ তার।
তিনি আরও বলেন, কেবল আমার ভাই লায়েক হত্যায় এমপি মানিকের মদদ নয়; একাধিক হত্যা মামলায় তার ইন্ধন ও মদদ রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালের ২২ জুন রাতে ছাতকের উত্তর খুমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনকি সম্পাদক ফারুক আহমদ হত্যা অন্যতম। ফারুকের স্ত্রী রেহেনা বেগম ওই বছরের ৩১ জুন সংবাদ সম্মেলন করে এমপি মানিকের বিরুদ্ধে খুনীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। ২০১৩ সালে ছাতকে সংঘর্ষে ছাতক টেকনিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাসুদুল ইসলাম হত্যা মামলায়ও মদদ দেন মানিক।
ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। মামলার একমাস হওয়ার আগেই নানা নাটকীয়তা আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই ন্যায় বিচার।’
তিনি হত্যার সাথে জড়িত এবং এর পেছনের কুশিলবদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।